সীমান্ত গান্ধী, বাদশা খান এই সমস্ত নাম বা উপাধি একই ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছিল, যার আসল নাম ছিল খান আবদুল গাফফার খান, যিনি প্রথম অ-ভারতীয় যিনি ভারতরত্ন পুরস্কার পান। তিনি গান্ধীবাদী চিন্তাধারায় বিশ্বাস করতেন এবং এর সাথে তিনি ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
পাকিস্তান সৃষ্টির সময় তিনি প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায়। তবে দেশ ভাগ হলে তার পৈতৃক নিবাস পাকিস্তানে চলে যায়। তবুও পাকিস্তান কখনোই তাকে নিজের বলে মেনে নেয়নি এবং বছরের পর বছর তাকে কারাগারে বা গৃহবন্দী করে রাখে। তিনি ২০ জানুয়ারী, ১৯৮৮ সালে বন্দী অবস্থায় মারা যান।
আবদুল গাফফার খান বাবার কাছ থেকে রাজনৈতিক লড়াইয়ের দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আলীগড় থেকে স্নাতক শেষ করে আবদুল গাফফার খান লন্ডনে যেতে চেয়েছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা এ জন্য প্রস্তুত ছিলনা তবুও তিনি সমাজসেবায় জড়িয়ে পড়েন। পরে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
খান আবদুল গাফফার খানের বয়স যখন মাত্র ২০ বছর তখন তিনি পেশোয়ারে একটি স্কুল খোলেন, যা ব্রিটিশদের পছন্দ হয়নি এবং তা নিষিদ্ধ হয়। এরপর ১৯১৯ সালে পেশোয়ারে সামরিক আইন জারি করা হয়েছিল। এতে আব্দুল গাফফার খান শান্তি প্রস্তাব পেশ করেন, যার কারণে ব্রিটিশরা তাকে গ্রেফতার করে।
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি খুদাই খিদমতগার নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে নামেন। তিনি ১৯২৮ সালে গান্ধীজির সাথে দেখা করেন এবং তাঁর অহিংসার রাজনীতি খুব পছন্দ হয়। ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির আলোচনা শুরু হলে খান আবদুল গাফফার খান এর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
যখন মনে হলো দেশভাগ ঠেকানো সম্ভব নয় এবং তখন তিনি পাকিস্তানের আদলে পশতুনদের জন্য আলাদা দেশের দাবি তুলে ধরেন। এতে কোনো প্রভাব পড়েনি এবং দেশভাগের পর পাকিস্তানে বাড়ি থাকায় তিনি সেখানে থাকতে শুরু করেন।
স্বাধীনতার পরেও তার লড়াই অব্যাহত ছিল এবং পাকিস্তানে তিনি পশতুনদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যান। স্বাধীন পাখতুনিস্তানের দাবিতে তিনি বহু বছর জেলে ছিলেন। তিনি তার মোট ৯৮ বছরের জীবনের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪২ বছর জেলে কাটিয়েছেন।
১৯৮৭ সালে, ভারত সরকার তাকে সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করে এবং তিনি এই সম্মান প্রাপ্ত প্রথম অ-ভারতীয় হন। ১৯৮৮ সালের ২০ জানুয়ারী খান আবদুল গাফফার খান গৃহবন্দী অবস্থাতেই মারা যান। যখন তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলছিল, তখন দুটি বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে ১৫ জন প্রাণ হারায়।