বর্তমান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলী ভারতীয় ক্রিকেটের আধুনিক রূপকার হিসেবে বিবেচিত হন। তার নেতৃত্বে ভারতীয় দল বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের সূচনা করে। যে সময়ে ভারতীয় দল ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত, সেই সময় তিনি একটি ভগ্নপ্রায় দলকে নিজের কাঁধে তুলে এতটাই শক্তিশালী করে তুলেছিলেন যে প্রতিপক্ষদের কাছে ভারতকে হারানো সহজ ছিল না।
অসাধারণ নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি, সৌরভ গাঙ্গুলী একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে কতখানি সফল ছিলেন তার পরিসংখ্যান প্রমাণ করে। শচীন-সৌরভ জুটি আজও বিশ্বের সেরা জুটি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এই প্রতিবেদনে মহারাজের নামে এমন কয়েকটি রেকর্ড রয়েছে, হয়তো কারও পক্ষে ভাঙ্গা আর সম্ভব নয়। এবার দেখে নেওয়া যাক:
১) ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডটি এখনও সৌরভ গাঙ্গুলি নামে রয়েছে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে তিনি ১৫৮ বলে ১৮৩ রানের একটি দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেছিলেন। এই ইনিংসে সাজানো ছিল ১৭টি চার ও ৭টি গগনচুম্বী ছক্কা।
২) সৌরভ গাঙ্গুলীকে কেবল আমরা একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে চিনি কিন্তু তিনি অলরাউন্ডার হিসেবেও কম যান না। বিশ্বে ৫ ক্রিকেটারের মধ্যে সৌরভ একজন, যিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০,০০০ রান সহ ১০০ উইকেট ও ১০০টি ক্যাচ ধরার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।
৩) সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে ভারতীয় দল কোনো আইসিসি ট্রফি না পেলেও, বিশেষ করে এই টুর্নামেন্টে নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন। চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফি ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি।
৪) সৌরভ গাঙ্গুলী বিশেষ করে মরণ-বাঁচন ম্যাচগুলোতে নিজের সেরাটা দিয়েছেন বারবার। তিনি একমাত্র ভারতীয় ব্যাটসম্যান যিনি আইসিসি টুর্নামেন্ট এর নকআউট পর্বে অর্থাৎ ফাইনাল ও সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ২০০০ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। এরপর ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন।
৫) সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে ভারতীয় দল দুইবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠেছিল। উল্লেখ্য ২০০০ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সৌরভ গাঙ্গুলী ১১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। এখনও পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
৬) সৌরভ শচীনের জুটি ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে উভয়ের জুটিতে সর্বোচ্চ ৬,৬০৯ রান ওঠে। এই সময়ে তাদের মধ্যে মোট ২১ বার শতরানের পার্টনারশিপ হয় — যা একটি বিশ্বরেকর্ড। সম্ভবত এই রেকর্ডটি আর কারোর পক্ষে ভাঙ্গা সম্ভব নয়।
৭) সৌরভ গাঙ্গুলী একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পরপর ৪টি ম্যাচে ‘ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ’ হন। ১৯৯৭ সালে সাহারা কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। সৌরভ দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২ রান ও ২ উইকেট, তৃতীয় ম্যাচে ৫ উইকেট, চতুর্থ ম্যাচে ৭৫ রান ও ২ উইকেট এবং পঞ্চম ম্যাচে ৯৬ রান ও ২ উইকেট নিয়েছিলেন। তার এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ভারতীয় দল ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়লাভ করে।