সকলেই জানেন, গীতার উপদেশ শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কুরুক্ষেত্রেই দিয়েছিলেন, যেখানে মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল। তবে আজও মহাভারত সম্পর্কিত এমন অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যা খুব কম মানুষই জানেন। কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। কিন্তু যুদ্ধের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন কুরুক্ষেত্রকেই বেছে নিয়েছিলেন, অন্য কোন স্থান নয় কেন?
টানা ১৮ দিন ব্যাপী বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে, যা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ নামে পরিচিত। যার ফলে উভয় পক্ষ থেকে কোটি কোটি যোদ্ধা নিহত হন। এর আগে কখনো এমন ভয়াবহ যুদ্ধ হয়নি এবং ভবিষ্যতেও এই ধরনের যুদ্ধ হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই।
মহাভারতের যুদ্ধের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেবল কুরুক্ষেত্রের জমিকেই বেছে নিয়েছিলেন – এর পিছনে রয়েছে এক গভীর রহস্য। ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, মহাভারতের যুদ্ধ স্থির হলে, যে স্থানে যুদ্ধ হবে তার সন্ধান শুরু হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে ক্রমবর্ধমান পাপ নির্মূল করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণ আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে পান্ডব-কৌরব ভাইয়েরা ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে কোন ভাবেই রাজী হবেন না। তাই যুদ্ধের জন্য এমন একটি জায়গা বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন যেখানে ক্রোধ, বিদ্বেষ সহ পাপে পরিপূর্ণ রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ তার সমস্ত দূতদের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে সেখানকার ঘটনাগুলির অনুসন্ধান করার নির্দেশ দেন।
দূতেরা ফিরে এসে একে একে বিভিন্ন ঘটনাগুলি শ্রীকৃষ্ণের কাছে তুলে ধরেন। যার মধ্যে একটি ছিল, কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে এক বড় ভাই তার ছোট ভাইকে বলেছিল তুমুল বৃষ্টি হওয়ায় জমির বাঁধ ভাঙার আগে বাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু সে সরাসরি ‘না’ করে দেয়। এতে বড় ভাই প্রচন্ড রেগে গিয়ে তার ছোট ভাইকে ছুরি দিয়ে হত্যা করে এবং তার লাশটিকে টেনে নিয়ে গিয়ে সেই বাঁধের উপরে চাপিয়ে দেয় যেখান দিয়ে জল বের হচ্ছিল।
শ্রীকৃষ্ণ এই ঘটনাটি শুনে অবাক হন এবং ভাবেন ভাই-ভাই, গুরু-শিষ্য এবং আত্মীয়-স্বজনদের যুদ্ধের জন্য কুরুক্ষেত্র একেবারে উপযুক্ত জায়গা। শ্রীকৃষ্ণ পুরোপুরি নিশ্চিত হন যে, এখানকার রীতিনীতি সম্পর্কে জানার পর ভাই-ভাইদের মধ্যে একে অপরের ভালোবাসা কখনোই বাড়বে না, উল্টে তারা আরো বেশি হিংসাত্মক হয়ে উঠবে। এর পরেই শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে মহাভারতের যুদ্ধের কথা ঘোষণা করেছিলেন।