মহেন্দ্র সিং ধোনির এমন পাঁচটি সিদ্ধান্ত, যা ভারতীয় ক্রিকেটের ভাগ্য বদলে দিয়েছে

মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক, যার মস্তিষ্কপ্রসূত কয়েকটি সিদ্ধান্ত ভারতীয় ক্রিকেটের ভাগ্যকে বদলে দিয়েছে। তার চাপ সামলানো, ম্যাচ বোঝাপড়া অতুলনীয় এবং সীমিত ওভারের খেলায় সেরা ফিনিশারদের মধ্যে একজন। ভারতীয় ক্রিকেটে তার অসামান্য অবদানগুলি দীর্ঘ সময় ধরে স্মরণীয় থাকবে এবং ধোনির এমন পাঁচটি সিদ্ধান্ত রয়েছে যা ভারতীয় ক্রিকেটের ভাগ্যকে বদলে দিয়েছে।

১) ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ১৮তম ওভারে ইশান্তের হাতে বল তুলে দেওয়া:

ইশান্ত শর্মা অতীতের সীমিত ওভারের ফরমাটে একজন বোলার ছিলেন এবং তিনি বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের যথেষ্ট সমস্যায় ফেলেছেন। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ২০ ওভারে মাত্র ১২৯ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিল।

India beat England India won by 5 runs - India vs England, ICC Champions Trophy, Final Match Summary, Report | ESPNcricinfo.com

জবাবে ইংল্যান্ড দল রান তাড়া করতে গিয়ে ভালো জায়গায় পৌঁছে যায়। কিন্তু ধোনি ১৮তম ওভারে ইশান্ত শর্মার হাতে বল তুলে দেন এবং ওই ওভারে তিনি রবি বোপারা এবং ইয়ন মরগান দুই সেট হওয়া ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। এটি ভারতীয় দলকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিততে সহায়তা করেছিল।

২) ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত:

সম্ভবত ভারত অধিনায়ক হিসেবে ধোনিকে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিতে হয় ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। কঠিন লড়াইয়ের পর ভারতীয় দল ফাইনালে উঠেছিল। ভারত প্রথমে ব্যাট করে ১৫৭ রান তোলে। জবাবে পাকিস্তানি দল শেষ পর্যন্ত ৫ রানের জন্য পরাজিত হয়। ওই ম্যাচে মিসবাহ ১৮তম ওভারে হরভজনকে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে খেলায় ফিরিয়ে দেয়।

Ten memorable T20 World Cup games

এরপর শেষ ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য ১৬ রান প্রয়োজন ছিল। এইসময় হরভজনের পরিবর্তে যোগীন্দর শর্মার হাতে বল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ধোনি। ওই ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকালেও শেষ পর্যন্ত তিনি মিসবাহর উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ের সীলমোহর দেন।

৩) ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্যাটিং ‘স্ট্রাটেজি’:

২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কা দলের অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের স্পিন বোলিং এর মোকাবিলায় এমএস ধোনির সেরা সিদ্ধান্তগুলি মধ্যে একটি ছিল। আসলে ভারতীয় দলের স্কোর যখন ১১৪ রানে ৩ উইকেট পড়ে সেই সময় বোলিং করেছিলেন মুরালিধরন। তখন যুবরাজের আগে ব্যাটিং করতে আসেন ধোনি এবং তিনি ধীরে ধীরে স্কোরকার্ডকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।

From 91* in World Cup final to 183* vs Sri Lanka, a look back at birthday boy MS Dhoni's memorable knocks

এরপর তিনি গৌতম গম্ভীরের সাথে একটি দুর্দান্ত পার্টনারশিপ গড়েন। মহেন্দ্র সিং ধোনির এই স্ট্রাটেজিটি কার্যকরী হয়েছিল। তিনি শেষ পর্যন্ত ৭৯ বলে ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন এবং ছক্কা হাঁকিয়ে ইনিংসটি শেষ করেছিলেন, যা কখনো ভোলার নয়।

৪) সঠিক সময়ে বিরাট কোহলির হাতে অধিনায়কত্ব হস্তান্তর:

মহেন্দ্র সিং ধোনি একজন অধিনায়ক হওয়ার পাশাপাশি দুর্দান্ত পরামর্শদাতা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি তরুণদের কাছ থেকে ভালো ফল পেতে সঠিক ভাবে গাইড করেছেন। এছাড়া বিরাট কোহলির সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।

Image

২০১৪ সালে ধোনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর বিরাট কোহলির হাতে অধিনায়কত্বের তুলে দেন এবং সেই সাথে একটি শক্তিশালী দল তৈরি করেছিলেন। একইভাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে কোহলিকে মহেন্দ্র সিং ধোনি যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন।

৫) রোহিত শর্মাকে ওপেন করতে পাঠানো:

২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রোহিত শর্মাকে ওপেনার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। মিডল অর্ডারে রোহিত শর্মা পারফরম্যান্স মোটেই ভাল ছিলনা, তাকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হয়েছিল। এই সময় দলে একজন ভালো ওপেনারের অভাব ছিলো। মহেন্দ্র সিং ধোনির চোখ পড়ে রোহিতের ওপর এবং তাকে ওপেন করতে পাঠায়।

Image

এরপর তাকে আর কখনো পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। শিখর ধাওয়ানের সাথে অসাধারণ জুটি গড়েন। এই ভারতীয় ওপেনার ওয়ানডে ক্রিকেটে বহু রেকর্ড ভেঙে নিজের নামে তৈরি করেছেন। ওয়ানডেতে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি সহ সর্বোচ্চ (২৬৪) ব্যক্তিগত রানের মালিক রোহিত শর্মা।