ভারতীয় ইতিহাসের সেরা ৩ গুপ্তচর, যাদের কাহিনী শুনলে গর্ববোধ করবেন
পর্দায় গোয়েন্দার জীবন খুব মজার এবং আকর্ষণীয় দেখায়, কিন্তু বাস্তব জীবনে তাদের জীবন সম্পূর্ণ বিপদের ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ। এই গুপ্তচরেরা অন্য কোন দেশে ছদ্ম নামে তাদের সাথে কাজ করেন ও প্রতি মুহূর্তে ধরা পড়ার ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।
আমাদের দেশের সৈন্যরা যেমন সর্বদা সীমান্তে দাঁড়িয়ে করে দেশকে রক্ষা করছেন, তেমনই গুপ্তচরেরাও দেশের বাইরে থেকে দেশকে রক্ষা করছেন। ভারতীয় ইতিহাসে এমন তিন গোয়েন্দা রয়েছেন, তাদের কাহিনী জানলে গর্ববোধ করবেন।
সেহমত খান: ইনি ছিলেন একজন কাশ্মীরি ব্যবসায়ীর মেয়ে ছিলেন। তিনি ভারতের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির মতো বিপজ্জনক কাজ বেছে নিয়েছিলেন। এই গুপ্তচর মহিলা একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে বিয়ে করেছিলেন যাতে তার পাকিস্তানে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়।
তিনি আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় একজন পাকিস্তানি কর্মকর্তার স্ত্রী হয়ে ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর পাকিস্তানে থাকাকালীন তিনি এক পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার প্রেমে পড়ে যান।
জেনে অবাক হবেন যে এই মহিলা গোয়েন্দা পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরে আসেন এবং তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গর্বের বিষয় হলো যে এই সাহসী মহিলার পুত্রও বড় হয়ে ভারতীয় সেনায় যোগদান করেছিল।
অজিত ডোভাল: ২০১৪ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টার পদে রয়েছেন অজিত ডোভাল। আশ্চর্যের বিষয়টি হ’ল তাঁর ৩৩ বছরের কর্মজীবনে তিনি ৭ বছর ধরে কেবলমাত্র পুলিশের ইউনিফর্ম পরেছিলেন। আসলে আইপিএস অফিসার ফিল্ড এজেন্ট হয়ে তিনি দেশের জন্য অনেক গোপন কাজ পরিচালনা করেছেন।
গুপ্তচর হিসাবে তিনি পাকিস্তানি মুসলিম হিসাবে ৭ বছর পাকিস্তানে থাকেন এবং ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠাতে থাকেন। তাকে সন্দেহ করার মতো কোনো আঁচ খুজে পায়নি পাকিস্তানিরা। অবশেষে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং তার এই কর্মের জন্য তাকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাহসী পুরষ্কার কীর্তিচক্র দেওয়া হয়।
রবীন্দ্র কৌশিক: মাত্র ২৩ বছর বয়সে রবীন্দ্র কৌশিক গুপ্তচর সেজে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন RAW এর বিখ্যাত এজেন্ট। গুপ্তচরবৃত্তির পাশাপাশি উর্দু এবং মুসলিমদের ধর্ম গ্রন্থ সম্পর্কে জেনে নেন এবং একজন মুসলিম নামেই পরিচিত হন।
পরে তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি শেষ করেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এরপর তাকে মেজর পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর এক পাকিস্তানি মেয়েকে বিয়েও করেন।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলেন যা প্রচুর কাজে এসেছিল। তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষা কাছে ‘দ্য ব্ল্যাক টাইগার’ নামে বিখ্যাত হন। একবার এক ভারতীয় তার সাথে দেখা করতে গেলে সন্দেহবশত তিনিও ধরা পড়ে যান।
টানা দু’বছর তাকে এক পাকিস্তানি জেলে অত্যাচার করা হয়। ফাঁসির সাজা হলেও তা মুকুব হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কিন্তু এদিকে তৎকালীন ভারত সরকার তার সম্পর্কে সবকিছুই অস্বীকার করে এবং যাবতীয় নথিপত্র নষ্ট করে দেয়। কৌশিকের পরিবার সাহায্য চাইলেও কোন উত্তর পাননি সরকারের থেকে। অবশেষে তিনি যক্ষ্মা রোগে মারা যান।