ইতিহাসের পাতা উল্টালেই বিভিন্ন রাজা ও রাজত্বকালের কাহিনী জানা যায়। এর মধ্যে কিছু রাজা ছিলেন স্বৈরাচারী আবার কিছু প্রজাদের সাথে মানিয়ে চলা স্নেহপরায়ন। তবে এমন এক ভারতীয় রাজা ছিলেন তার চল্লিশ বছর রাজত্ব কালে কোন ব্যক্তিকেই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন নি। এবার জেনে নেওয়া যাক সেই বিখ্যাত মহারাজার সম্পর্কেঃ-
উনিশ শতকের বিখ্যাত ভারতীয় মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের রাজত্বকে ‘স্বর্ণযুগ’ বলা গেলে, কোনও ভুল হবে না। পাঞ্জাবের এই মহারাজাকে ‘শের-ই-পাঞ্জাব’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, তিনি তাঁর চল্লিশ বছরের রাজত্বকালে কাউকেই শাস্তি দেননি। অন্যদিকে তার সমসাময়িক শাসকরা কথায় কথায় মৃত্যুদণ্ড দিতেন।
মহারাজা রণজিৎ সিং ১৭৮০ সালের ১৯ নভেম্বর গুজারানওয়ালায় জন্মগ্রহণ করেন, বর্তমানে এটি পাকিস্তানে অবস্থিত। তিনি শিখদের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবে গণ্য হতেন। রণজিৎ সিং পাঞ্জাবকে কেবল একটি শক্তিশালী প্রদেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তার জীবিত অবস্থায় ব্রিটিশরা কখনো তাঁর সাম্রাজ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি।
১৭৯৮ সালে জামান শাহ দুরানি নামে এক বহিঃশত্রু ভারতবর্ষকে আক্রমন করেন। পাঞ্জাব দখল করতে গেলে ১৮ বছর বয়সী রণজিৎ সিং তার দলবল নিয়ে প্রতিরোধ করে। শাহ দুরানি রণজিৎ সিং এর হাতে বেধড়ক মার খেয়ে পালিয়ে যান। এরপর ২১ বছর বয়সেই পাঞ্জাবের রাজা হন রণজিৎ সিং। ১৮০১ সাল থেকে আমৃত্যু পঞ্জাবে রাজত্ব করেন তিনি।
তিনি প্রতিপক্ষদেরও সর্বদা উদারতা দেখাতেন। যুদ্ধে হেরে যাওয়া রাজাকেও রাজত্ব ফিরিয়ে দিতেন। মানুষের মধ্যে কোনও বিভাজন সৃষ্টি করতেন না। একজন যোগ্য পিতা বা রাজার মতো প্রজাদের দেখতেন তিনি। জানা যায়, তিনি এক চোখে দেখতে পেতেন।
ছোটবেলায় চক্ষু রোগের কারণে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে তিনি বলতেন, “ঈশ্বর আমাকে একটি চোখ দিয়েছেন, যাতে আমি হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টান, ধনী-গরীব সকলেই সমান ভাবে দেখতে পারি।” ১৮৩৯ সালে রঞ্জিত সিংয়ের মৃত্যুর পর, শিখ সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিভাগ এবং রাজনৈতিক অব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
সম্প্রতি, বিবিসি ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি ম্যাগাজিনের তরফে বিশ্বের সেরা নেতা বাছাইয়ে একটি সমীক্ষার আয়োজন করা হয়। জনমত সমীক্ষায় এই “পাঞ্জাব কেশরী”কে বিশ্বের সর্বকালের সেরা নেতার শিরোপা দেওয়া হয়েছে।