লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এই ডাক্তার নিজেকে সাপ দ্বারা দংশন করে আত্মত্যাগ করেছিলেন

এই ডাক্তার নিজেকে সাপ দ্বারা দংশন করে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিষের প্রতিক্রিয়া লিখেছিলেন

আফ্রিকার জঙ্গলে বুমসল্যাং (Boomslang) নামের একটি অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ (Poisonous Snake) পাওয়া যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ককে মারার জন্য মাত্র ০.১ মিলিগ্রাম বুমস্ল্যাং বিষই যথেষ্ট। এর এক ফোঁটা বিষ প্রায় ৫০০ জনকে মেরে ফেলতে পারে।। এর কামড়ে, মানুষ বুঝতেও পারে না, কারণ এর বিষ অন্যান্য সাপের মতো তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে না।

Image

বুমস্ল্যাং কামড়ালে মৃত্যু নিশ্চিত তবে, সময়মতো অ্যান্টিভেনম (Antivenom) গ্রহণ করলে বাঁচানো যায়। বুমস্ল্যাং-এর বিষ শরীরে রক্ত ​​জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিটি যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুবরণ করে। আমেরিকান ডাঃ কার্ল প্যাটারসন শ্মিড্ট (Dr. Karl Patterson Schmidt) মানুষের শরীরে বুমস্ল্যাং-এর বিষের ওষুধ খুঁজে বের করার জন্য নিজের উপর একটি মারাত্মক পরীক্ষা করেছিলেন।

১৯৫৭ সালে শিকাগোর জাদুঘরে নিজেকে তিনি একটি বুমস্ল্যাং সাপ দিয়ে দংশন করান। তিনি তার ডায়েরিতে বুমস্ল্যাং দ্বারা কাটা থেকে মৃত্যুর আগে অজ্ঞান হয়ে পড়া পর্যন্ত লিখেছিলেন। ডাঃ শ্মিট লিখেছেন যে, বিকালে বুমস্ল্যাং সাপে কামড়ানোর কয়েক ঘন্টা পরে বমি হওয়ার অনুভূতি হয়েছিল। এরপর প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং কম্পনের অনুভূতি ছিল।

Image

এরপর এলো ১০১.৭ ডিগ্রি জ্বর। প্রথম থেকেই মাড়ি দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। রাতে কিছু খাওয়ার পর ৩ ঘণ্টা আরাম করে ঘুমালাম। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে প্রস্রাব করার সময় রক্ত ​​আসলো। পরদিন সকালে বমি হয়। অপাচ্য খাবার বেরিয়ে আসে। এরপর আমার তাপমাত্রা পরীক্ষা করি, যা স্বাভাবিক ছিল। তখন প্রস্রাব আসেনি।

এর পর প্রতি ৩ ঘণ্টায় মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ​​ঝরতে থাকে। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি ছিল না। বিকেলে, ডঃ শ্মিট তার স্ত্রীকে ডেকে জানান যে তাকে একটি বুমস্ল্যাং সাপে কামড়েছে। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তার স্ত্রী জরুরি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

Image

দেখা যায়, বুমস্ল্যাং-এর বিষের কারণে ফুসফুস, চোখ, হৃৎপিণ্ড, কিডনি ও মস্তিষ্ক থেকে রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মারা গেছেন। ডঃ শ্মিট এর আত্মত্যাগ অ্যান্টি-বুমস্ল্যাং সাপের বিষ তৈরিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিল। এ কারণে এখন পর্যন্ত আফ্রিকার লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বুমস্ল্যাং-এর অ্যান্টিভেনমকে আরও কার্যকরী করে তুলতে সাহায্য করেছে।