বর্তমানে নারীদের হেনস্তার ঘটনা যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠছে। আর এই ঘটনা শুধুমাত্র এখনকার সময়ের তা নয়, বহু আগে থেকেই এরকম নিন্দনীয় ঘটনা হয়ে আসছে। ইংরেজ ও মুঘল আমলেও নারীদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হতো এবং তারা যেন হিন্দু নারীদের শুধুমাত্র সম্পদ বলে মনে করতো।
এমনকি মুঘল রাজার নজর যে হিন্দু নারীর উপর পড়তো তাকেই তারা শোষন করতে উদ্ধত্য হত। তবে সেই সময় এমন কিছু নারীও ছিলেন যারা কখনো মোঘলদের সামনে মাথা নত করেননি। তেমনই এক বীরঙ্গনা ছিলেন কিরন দেবী। তিনি ছিলেন মহারানা প্রতাপ-এর ভাইজি, শক্তি সিংয়ের কন্যা ও পৃথ্বীরাজ রাঠোরের স্ত্রী।
সেই সময় ভারতের মোঘল আমলে এক মেলার আয়োজন করা হতো শুধুমাত্র মোঘল রাজাদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য এবং সেখানে অন্যান্য পুরুষদের যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এই মেলায় আকবর কিরন দেবীকে দেখেছিলেন এবং দেখামাত্র তাকে পাওয়ার জন্য পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছিলেন।
এই পরিকল্পনা মাফিক আকবরের অধীনে সেনা হিসেবে নিযুক্ত থাকা কিরনদেবীর স্বামী পৃথ্বীরাজ রাঠোরকে এক যুদ্ধের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর কিরনদেবীকে মহলে আসার জন্য দূত দ্বারা নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়। নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য কিরনদেবী মহলে আসলে তখন তাকে আকবর বলেন যে আমি আপনাকে আমার বেগম হিসেবে রাখতে চাই।
এই কথার জবাবে কিরন দেবী বলেছিলেন যে, আমি একজন বিবাহিত স্ত্রী এবং আপনার প্রজা তাই আপনার উচিত আমাকে খারাপ চোখে দেখার পরিবর্তে আমাকে সুরক্ষা প্রদান করা।
কিন্তু আকবর কিরণ দেবীর কথাতে একমত হতে কোনমতেই রাজি ছিলেন না। তখন কিরনদেবী বিচলিত না হয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন। যেহেতু কিরণদেবীর ছোট থেকেই যুদ্ধ কৌশল শেখা ছিল,তাই তখন যুদ্ধকৌশলকে কাজে লাগিয়ে আকবরকে নিচে ফেলে দেন তিনি।
এরপর এই বীরঙ্গনা আকবরের বুকে উপর পা রেখে গলায় ছোরা ধরে বলেন যে, “বাদশা বল তোর শেষ ইচ্ছা কী? আমি হলাম মহারানা প্রতাপ এর ভাইজি যার জন্য তোর রাতের ঘুম উড়ে যায়।” এই কথা শোনার পর আকবর নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টায় কিরন দেবীর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চায়।
এরপর কিরনদেবী তার কাছে বেশ কিছু প্রতিজ্ঞা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন। আর এই প্রতিজ্ঞাগুলির মধ্যে একটি হলো যে, আকবর যেন আর কোনদিন নিজের লালসা চরিতার্থ করার জন্য মেলার আয়োজন না করে।