পতিতালয়ের মাটি ছাড়া তৈরি হয়না দেবী দুর্গার মূর্তি, কিন্তু কেন এমন নিয়ম?

মা দুর্গা একদিকে যেমন পবিত্রতা ও শুভ্রতার প্রতীক অন্যদিকে তারই মূর্তি তৈরিতে ব্যবহার হয় তথাকথিত অপবিত্র, অশুচি এলাকার মাটি। মা দুর্গার চলে যাওয়ার সাথে সাথেই পরের বছরের জন্য শুরু হয়ে যায় পুজোর প্রস্তুতি। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোর পাড়ায় মৃৎশিল্পীরা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের কাদামাখা হাতে জেগে ওঠে মৃন্ময়ীরূপে দেবী দুর্গা। প্রথমে একেমেটে, তারপরে দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে ফুটে ওঠেন তিনি।

The Powerful Reason Why Soil From Brothels' Homes Is Used To Make Goddess Durga's Idols

কিন্তু শাস্ত্র মতে সেই দেবী দুর্গাকে মৃন্ময়ীরূপে ফুটিয়ে তুলতে কয়েকটি জিনিসের দরকার আবশ্যক হয়ে ওঠে। যেমন পবিত্র গঙ্গার জল, গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শীষ ও নিষিদ্ধ পল্লী মাটি – এই সবগুলির মিশ্রণে তৈরি হয় দেবী দুর্গার মূর্তি। কিন্তু কেন এমন নিয়ম?

Kolkata (calcutta), India - September Stock Footage Video (100% Royalty-free) 6191906 | Shutterstock

সমাজে যাদের ভাল চোখে দেখেনা, তাদের প্রতি অবজ্ঞা ও বঞ্চনার পাহাড় জমে উঠেছে কিন্তু তাদেরই দেওয়ালের মৃত্তিকা ছাড়া পূর্ণ হয়না দেবীর মূর্তি। শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, পুরুষ মানুষ যখন কোন পতিতালয়ের গিয়ে পতিতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয় তখন তিনি তার জীবনের সকল সঞ্চিত পূণ্য সেখানেই ফেলে আসেন। আর তারা বয়ে নিয়ে যান পাপের বোঝা।

চিরাচরিতভাবে মানব সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, মানুষের মধ্যে লালসা, বাসনা ও কামনার রয়েছে – যা পতিতারা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। আর এইভাবে তারা নিজেদের অশুদ্ধ ও অপবিত্র সমাজকে শুদ্ধ করে তোলে। এর ফলে হাজার হাজার পুরুষের আগমন পতিতালয়ের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ভূমি। সেই কারণেই এই মাটি দিয়ে তৈরি হয় দেবী দুর্গার মূর্তি।

বদলে গেল দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর নাম

এই রীতি দ্বারা বোঝানো হয়, নারীরা মায়ের জাতি আর তাদের ঔরসে জন্ম হয় পুরুষের। নারীকে পতিতা বানায় কেবল পুরুষেরাই। আর ওই পুরুষরাই হয়ে ওঠে অপবিত্র। তাই দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরীতে দরকার হয়ে পড়ে পতিতালয়ের মাটি অর্থাৎ এই পরিস্থিতির যারা শিকার তাদের সম্মান করা উচিত। নারীরা কখনোই অপবিত্র হয় না, এই ধারণাটি লুকিয়ে রয়েছে এই রীতির আড়ালে। 

এছাড়াও জানা গিয়েছে, দেবী দুর্গার অকালবোধন হয় শরৎকালে। সেই সময় মহামায়া নয়টি রূপে পূজিত হন। আর এই নবম রূপটি হলো আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি। তাই মনে করা হয় সেই কারনেও এমন রীতির উদ্ভব হয়েছে।