বিশ্বের ইতিহাসের পাতা খুঁজলে বহু সভ্যতার উত্থান পতনের পরিচয় পাওয়া যাবে। তবে একমাত্র ভারতীয় সভ্যতার নানান প্রতিকূলতা এবং ক্ষয়ক্ষতির সাথে আজও হিমালয় পর্বতের মত দাঁড়িয়ে আছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় যে ভারতের বেশিরভাগ ইতিহাসে গৌরবময় কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে যা পড়ানো হয় তা সম্পূর্ণ মনগড়া ইতিহাস।
বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু সম্রাটদের গৌরবময় কাহিনীগুলিবাদ দিয়ে পড়ানো হয় বিদেশী লুণ্ঠনকারী ও কিছু স্বৈরাচারী শাসকদের ইতিহাস। এমনকি লজ্জার বিষয় হলো পাঠ্যপুস্তকে তাদের আতঙ্কবাদী না বলে “সম্রাট” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যারা আবার সেই সকল মহান হিন্দু সম্রাটদের বিরুদ্ধে বেইমানি করে হত্যা করেছিল।
ভারতীয় ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক থেকে যে বীরগাথার কাহিনীগুলি বাদ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো হিন্দু ওহম সাম্রাজ্য। ওহম সেনারা যুদ্ধে মোগলদের ১৭ বার পরাজিত করে। সরাইঘাট এর যুদ্ধটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, যা মুঘলদের সাথে ওহম সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে মুঘলদের কাছে ছিল বৃহত্তর সেনাবাহিনী অন্যদিকে কাছে ছিল শিবাজী লাচিত বরফুকন।
এখনো পর্যন্ত সাধারণ মানুষ লাচিত বরফুকনকে চেনা তো দূরের কথা তার নাম পর্যন্ত শোনেনি। কিন্তু আজও এই হিন্দু যোদ্ধাকে ভারতীয় সেনারা সম্মান জানান। পুনেতে তার একটি স্ট্যাচু রয়েছে যেখানে ভারতীয় সেনাদের ট্রেনিং করানো হয় এবং লাচিত বরফুকানের এর বিষয়ে জানানো হয়, যুদ্ধের কৌশল গুলি বলা হয়।
এই মহান হিন্দু যোদ্ধা জন্ম হয়েছিল ১৬২২ সালে ২৪শে নভেম্বর। তিনি ছিলেন পূর্ব ভারতের অসমের বাসিন্দা। তিনি ছিলেন হিন্দু ওহম সাম্রাজ্যের প্রধান সেনাপতি। ১৬৭১ খ্রিস্টাব্দে মোগল অতর্কিত ভাবে ওহম সাম্রাজ্যের ওপর চড়াও হয়। এবং সেই সময় বরফুকানের এর হাতে ছিল কামান। উভয়পক্ষের সেনাদের নিয়ে তুমুল যুদ্ধ হয় এই যুদ্ধ ইতিহাসে সরাইঘাটের যুদ্ধ নামে পরিচিত। মোগলদের উদ্দেশ্য ছিল সেখানকার হিন্দু রাজাদের হত্যা করে সমস্ত সম্পত্তি লুটপাট এবং নারীদের উপর অত্যাচার করা।
এই যুদ্ধে ছিলেন ঔরঙ্গজেবের মামা শায়েস্তা খান। মোগলদের বিশাল সৈন্যবাহিনী দেখে পিছু হটতে শুরু করে ওহম সৈন্যদলেরা। কারণ তাদের তুলনায় বহুগুণে ছোট ছিল। অন্যদিকে অসমের রাজধানী গুহাটিতে তারা দখল করে বসে। যখন হিন্দু সেনারা জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছে ঠিক সেই সময় পাল্টা জবাব দিতে ঘুরে দাঁড়ান লাচিত বরফুকান।
তিনি আবার সকল হিন্দু বাহিনীর সাথে সংলাপ করেন এবং যুদ্ধ করতে সাহস যোগান। এই হিন্দু মহান যোদ্ধা বলেছিলেন, যদি কারোর পালানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে সে অবশ্যই যেতে পারে কারণ আমার শেষ রক্তবিন্দু টুকু শরীরে থাকতে লড়াই করে যাব। তবে কেউ সেনাবাহিনী ছেড়ে গেলে সে যেন কারোর কাছে একথা স্বীকার না করে, যাতে মোঘলরা তাদের দুর্বলতার সুযোগ না পায়।
সেনাবাহিনী দের মধ্যে তিনি এমন তেজ ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যাতে মুঘলরাও হার মেনে যায়। হিন্দুরা ওহম সেনারা দৃঢ়-সংকল্পবদ্ধ হয় যে তাদের মাতৃভূমি এবং মা বোনেদের সম্মান রক্ষা করবে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল এই সাম্রাজ্য একবার মুঘলদের হাতে চলে গেলে কখনই তারা হিন্দু নারীর সম্মান রক্ষা করতে পারবে না।