ভারতবর্ষে ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি ধর্মের চেয়েও ঊর্ধ্বে কারণ সকল ধর্মের মানুষ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রাক্তন ক্রিকেটাররা আজ বিপুল অর্থ-সম্পদে বলবৎ হয়ে অতি সম্মানের সাথে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। কিন্তু এমন এক বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার রয়েছেন যার ভাগ্য কখনো সাথ দেয়নি, জীবিকা নির্বাহের জন্য আজ তাকে মহিষ চড়াতে হচ্ছে।
দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা যে কোন ক্রিকেটারের পক্ষে একটি স্বপ্ন থাকে। ভালাজী দামোরও ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে এই অলরাউন্ডার কেবল টুর্নামেন্টের নায়কই ছিলেন না, এই অন্ধ ক্রিকেটারের জন্য ভারতীয় দল সেমিফাইনালে উঠতে পারে। আসলে এটি ছিল, অন্ধ ক্রিকেটারদের নিয়ে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট।
কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া এই অন্ধ ক্রিকেটার ভেবেছিলেন যে বিশ্বকাপের পরে তার জীবন পুরোপুরি বদলে যাবে। কিন্তু আজ ১৮ বছর পরে এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারের দুর্দশা এমনই যে অল্পস্বল্প জমিতে কৃষিকাজ ও মহিষ চড়িয়ে করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।
গুজরাটের এই অন্ধ ক্রিকেট তারকা ভারতের হয়ে সর্বাধিক উইকেট নিয়েছেন। ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত রেকর্ড রয়েছে। ভালাজী দামোর ১২৫ ম্যাচে ৩,১২৫ রান সহ ১৫০টি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া ভারতের হয়ে ৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন।
ভালাজী দামোর বলেছেন, “বিশ্বকাপের পরে আমি ভেবেছিলাম কোথাও একটি চাকরি পাব। কিন্তু কোথাও চাকরি পায়নি। এমনকি একজন স্পোর্টসম্যান ও প্রতিবন্ধী কোটা থাকার পরেও কেউ আমাকে সাহায্য করেনি। স্থানীয় নেতারা তার প্রশংসা করেছিলেন, তবে প্রয়োজন ছিল একটি চাকরি।”
আরাভালি জেলার অন্তর্গত পিপরানা গ্রামের জমিতে কঠোর পরিশ্রম করে তাদের পরিবারের মাসিক আয় মাত্র ৩,০০০ টাকা। ভালাজীর স্ত্রী অনুও একটি ফার্মে কাজ করেন। পুরো পরিবার একটি ঝুপড়ির মধ্যে বসবাস করছে আর সেখানে এই ক্রিকেট তারকার ক্যারিয়ারে প্রাপ্ত পুরস্কার ও শংসাপত্রগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রপতির দ্বারা পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি।
দ্য ব্লাইন্ড ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাস্কর মেহতা বলেছেন যে, “ভালাজীর মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে ভারতীয় অন্ধ ক্রিকেট দল আর খুঁজে পায়নি। বিশ্বকাপের সময় তার সতীর্থরা তাকে শচীন টেন্ডুলকার বলে ডাকতেন।”
এদিকে বর্তমানে ক্রিকেটাররা প্রচুর পরিমানে আয় করছেন। আর অন্যদিকে ভালাজীর মতো ক্রিকেটারদের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার পরে কেবল বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।