অল ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স এক্সামের ছেলেটার রাঙ্ক ছিল ৭ অর্থাৎ ভারতবর্ষের লক্ষ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে ৭ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছিল ছেলেটা। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ফিজিক্স অলিম্পিয়াড এদেশের মেধাবী প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিল সুশান্ত সিং রাজপুত। সেই মেধাবী ছেলে নাকি একদিন মাঝপথে ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশোনা ছেড়ে ছুটতে শুরু করল নিজের অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে।
কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারবে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করলে যেখানে মোটা মাইনের কর্পোরেট দুনিয়া। আর সেই ভবিষ্যৎ শেষ করে দিয়ে কটা ছেলে-মেয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারবে? তবে পেরেছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। একটা সময় সমস্ত তাবড় তাবড় অভিনেতাদের পেছনে ফেলে ভারতবর্ষের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক এর চরিত্রে অভিনয় সম্মান অর্জন করেছিলেন।
এমনই আত্মবিশ্বাস আর নিষ্ঠা ছিল ওর মধ্যে আর তাই জন্যই তো এতটা ভয় লাগছে, যে মানুষটা এতটা মেধাবী হওয়ার পরও শুধুমাত্র অভিনয়কে ভালোবেসেই দিনের-পর-দিন স্ট্রাগেল করে নিজের ক্যারিয়ারকে এই পর্যায়ে নিয়ে গেল আর সেটা একটা নাইলনের দড়ি আর একটা কঠিন সিদ্ধান্ত এক মুহূর্তেই শেষ করে দিল। নিভে গেল মাত্র ৩৪ বছরেই তার জীবনের প্রদীপ।
বিগত ছয় মাস ধরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন চলছিল, তিনমাস গৃহবন্দী। সাফল্য, অর্থ, শিক্ষা, ফিজিক্যাল ফিটনেস সবই ছিল তারমধ্যে। দিল্লির ইঞ্জিনিয়ার থেকে মুম্বাইয়ের অভিনেতা হয়ে ওঠা লাখ লাখ মেয়ের নয়নের মনি আর এভাবে জীবন শেষ করে দিতে এই হাসিখুশি ছেলেটা? এই ছেলের কোন ডিপ্রেশন থাকতে পারে?
সিরিয়ালের এত জনপ্রিয়তা, কাই পো ছের মতো ছবি, ব্যোমকেশ বক্সী, মহেন্দ্র সিং ধোনির মত চরিত্র আর শেষ ছবি ব্লকবাস্টার ছিছরে, যে মুভিটা আত্মহত্যার বিরুদ্ধে জীবনকে উদযাপন করে দিয়েছিলেন। মানসিক স্বাস্থ্য কার কি চলছে কেউ বলতে পারেনা। আমাদের অনেকের ধারণা যে কারি কারি অর্থ-সম্পদ কিংবা সফলতা মানুষের জীবনে সুখ এনে দেয়, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
জীবনে চলার পথ ধরেই আমাদের চলতে হবে আর এই আঁকাবাঁকা পথে খুঁজে নিতে হবে। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহত্যার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া কখনও উচিত নয়। বেঁচে থাকাটাই আসল। ভুবনভোলানো হাসি অভিনেতার অভিনয় নিঃসন্দেহে বলিউডপ্রেমীদের জন্য অপূরণীয়। যেখানে থাকবেন ভাল থাকবেন ভক্তদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন সুশান্ত সিং রাজপুত।