একসময় ভারত ‘সোনার পাখি’ (Golden Bird) নামে পরিচিত ছিল। এ কারণেই সবসময় বিদেশি লুণ্ঠনকারীদের আকৃষ্ট করত। মুঘল হোক বা ব্রিটিশ, সবাই সাধ্যমতো ভারত লুট করেছে। যদিও এর পরেও আজ ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি। বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ভারত ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আধিপত্য।
আম্বানি হোক বা আদানি…বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়ীদের কথা উঠলে অবশ্যই তাদের নাম উঠে আসে। কিন্তু আজ আমরা যার কথা বলছি তাঁকে বলা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী। আপনি তার সম্পদের পরিমাণ জানলে অবাক হবেন এবং তিনি ভারত শাসনকারী ব্রিটিশ ও মুঘলদের ঋণ দিয়েছিলেন।
ভারতীয় এই ব্যবসায়ীর নাম বীরজি ভোরা (Birji Vora)। তিনি ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের একজন সুরাটে জন্মগ্রহণকারী ব্যবসায়ী। যিনি মুঘল ও ব্রিটিশদের ঋণ দিতেন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া ফ্যাক্টরি রেকর্ডে, তাকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী (Richest Businessman) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বীরজি ভোরা ব্রিটিশদের কাছে মার্চেন্ট প্রিন্স (Merchant Prince) নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি অনেক কিছুর পাইকারি ব্যবসা করতেন। তিনি জানতেন কোন বাজারে কী বিক্রি হতে পারে। পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই বন্দরগুলির মাধ্যমে তিনি সারা বিশ্বে তার ব্যবসা করতেন। ১৬ শতকে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার, যা আজ ট্রিলিয়ন ডলারের সমান।
তিনি সুরাটে কিছু আমদানির উপর একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেন এবং সোনা, আফিম, বুলিয়ন, প্রবাল, হাতির দাঁত, এলাচ, গোলমরিচ এবং সীসা সহ বিভিন্ন পণ্যের লেনদেন করেন। একজন মহাজন হিসাবে বীরজি ভোরা প্রায়ই ইংরেজদের অর্থ সরবরাহ করতেন যারা তাদের নিজস্ব ছোট কোম্পানি শুরু করতে আগ্রহী ছিল।
একবার মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ভারতের দাক্ষিণাত্য অঞ্চল জয় করার অভিযানের সময় আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হলে তহবিলের সন্ধানে বীরজির কাছে একজন প্রতিনিধিকে পাঠান। মুঘলদের সাহায্য করায় ১৬৬৪ সালে শিবাজী মহারাজ সুরাটে আক্রমণ করে এবং বীরজি ভোরা গুরুতর আহত হন। মারাঠা বাহিনী তার বাড়িঘর এবং গুদাম ধ্বংস করে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (East India Company) নথি অনুসারে, বীরজি ভোরা ব্রিটিশদের ১৬১৯ সালে ২৫০০০ টাকা, ১৬৩০ সালে ৫০০০০ টাকা, ১৬৩৫ সালে ২০০০০ টাকা এবং ১৬৩৬ সালে ২ লক্ষ টাকা ঋণ দেন। এরপর ১৬৪২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বলে যে বীরজি ভোরা তাদের সবচেয়ে বড় পাওনাদার ছিলেন। ওই রিপোর্টে এও উল্লেখ রয়েছে যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যখন ঋণের প্রয়োজন হত, তখন তারা বীরজি ভোরার কাছে যেত।