ধোনির ৯১ নাকি গম্ভীরের ৯৭! বিশ্বকাপ ২০১১ ফাইনালে কোন ইনিংসটি সেরা

২৮ বছর পর ভারতীয় দল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে দুই নায়ক গৌতম গম্ভীর এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির ঐতিহাসিক ইনিংস দুটি আজও ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল রয়েছে। তবে গৌতম গম্ভীরের ৯৭ রান ও মহেন্দ্র সিং ধোনির অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংস দুটি নিয়ে মাঝেমধ্যেই তুমুলতর্ক বিতর্ক চলে। কিছু মানুষ মনে করেন গম্ভীরের ইনিংসটি সেরা, অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করেন ধোনির ইনিংসটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

২০১১ সালের ২রা এপ্রিল, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে একদিকে গ্যালারি ভরা দর্শকদের প্রবল উত্তেজনা ও অন্যদিকে ফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচ। শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে ভারতীয় বোলারদের চাপে পড়লেও মাহেলা জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ২৭৪ রান তোলে। এরপর ভারতীয় ইনিংসের শুরুতেই বীরেন্দ্র শেহবাগ (০) ও শচীন (১৮) আউট হলে জয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়। 

এমন পরিস্থিতিতে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নামা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান গৌতম গম্ভীর ম্যাচের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। এরপর বিরাট কোহলির (৩৫) সাথে ৮৩ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ গড়েন। এই সময় ভারতীয় দলের স্কোর ছিল ১১৪/৩, এখান থেকেও জয়ের রাস্তা মোটেই সহজ ছিল না। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে আসা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে সেদিন তার চেনা ছন্দে দেখেছিল ভারতীয় সমর্থকরা।  

ম্যাচের কঠিন পথ পেরোতে হবে জেনেও তিনি (ধোনি) শান্ত থেকে নিজের আসল খেলাটা খেলে যান। অন্যদিকে গম্ভীর কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়। ধীরে ধীরে তিনি সেঞ্চুরির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। ততক্ষণে গ্যালারির সমস্ত সমর্থকদের মধ্যে একটা খুশির পরিবেশ তৈরী হয়েছিল। হঠাৎই থিসারা পেরেরার বলে বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান গৌতম গম্ভীর (১২২ বলে ৯৭)। মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন। 

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা যুবরাজ সিংয়ের সাথে ধোনি ভারতের দলের জয়ে রাস্তা আরও পরিষ্কার করে ফেলেন। একদিকে যুবরাজ সিং (২১*) ধোনিকে স্ট্রাইক দিয়ে রান রেট কমিয়ে আনছিলেন। অন্যদিকে আক্রমনাত্মক মেজাজে ব্যাটিং করতে দেখা যাচ্ছিল ধোনিকে। জয়ের ৪ রান বাকি থাকতেই নুয়ান কুলাসেকারাকে একটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতীয় দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন এবং ৭৯ বলে ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন ধোনি।

যাইহোক ধোনি ও গম্ভীরের ইনিংস দুটি ভারতীয় সমর্থকদের মনিকোঠায় চিরকাল থেকে যাবে। যে সময়ে সেহবাগ ও শচীন টেন্ডুলকারের মত উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল ভারতীয় দল, সেসময় তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যান। এই ইনিংস দুটি একে অপরের পরিপূরক। তাই আমাদের উচিত উভয় ইনিংসকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া। যেহেতু ক্রিকেট একটি দলগত খেলা তাই কখনও একজনের উপর নির্ভর করে ম্যাচ জেতা যায় না।