বিশ্বের কাছে জনপ্রিয় হলেও স্থানীয়দের কাছে এই লবণের পাহাড় একটি অভিশাপ

সল্টদূর থেকে দেখতে ঠিক যেন বরফের পাহাড়। এতটাই ধবধবে সাদা যে রোদের ঝলকানিতে বেশীক্ষন চোখ রাখা যায় না। সারা বিশ্বে এই লবণ পাহাড়ের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও এটি স্থানীয়দের কাছে একটি অভিশাপ।

এই পাহাড়ের ধুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এবং পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। এই পাহাড়টি জার্মানির একটি ছোট্ট গ্রাম হেরিনজোনের কাছে অবস্থিত। 

হেরিনজেনে কী ভাবে তৈরি হল এই নুনের পাহাড়? এর নির্মাণ শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। একটু একটু করে নুন জমতে জমতে বিশালাকার পাহাড়ের রূপ নিয়েছে এটি।

পাহাড়টি তৈরি করা হয়েছে কেবল লবণ দিয়ে। সেখানকার স্থানীয় মানুষদের কাছে এই পাহাড়টি মন্টে কালি বা কালিমঞ্জারো নামে পরিচিত। পাহাড়টি নির্মিত হয়েছে মানুষ কর্তৃক।

কিভাবে তৈরি হলো এই লবণের পাহাড়? পাহাড়টির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। একটু একটু করে লবণ জমতে শুরু করে এবং বিশাল আকৃতির পাহাড়ের রূপ ধারণ করে।

জার্মানির একটি পটাস উত্তোলক সংস্থা কে প্লাস এস রাসায়নিক সংস্থা। পটাস উত্তোলনের পর উপজাত দ্রব্য হিসাবে পড়ে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা নুন।

জানা যায় এখানে একটি পটাশ উত্তোলক সংস্থা পটাশ উত্তোলনের পর উপজাত দ্রব্য গুলি পড়ে থাকে যা সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ।

গত ৪৫ বছর ধরে সেই লবণ এই অঞ্চলে একটু একটু করে জমতে জমতে আজ ৫৫০ মিটার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পাহাড়টি।

এই নুনই সেই ১৯৭৬ সাল থেকে ওই অঞ্চলে জমাতে শুরু করে সংস্থাটি। ৪৫ বছর ধরে জমতে জমতে আজ সেটির উচ্চতা দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচশো মিটার!

প্রায় ২৫০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই পাহাড়ে আনুমানিক ২০ কোটি টন লবণ জমে রয়েছে। প্রতিবছর এই পাহাড়ে জমছে প্রায় ৭০ লক্ষ টন লবণ। তাই এই পাহাড়ের উচ্চতা একটু একটু করে প্রতি বছরই বেড়েই চলেছে। 

গত এক দশক ধরে এই লবণের পাহাড় পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের অন্যতম জায়গা হয়ে ওঠে। বিশ্বের একাধিক জনপ্রিয় ব্যান্ড এই পাহাড়ের চূড়ায় প্রতিবছর গানের অনুষ্ঠান করে। 

২০০৯ সাল থেকেই মূলত এই নুনের পাহাড় পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা হয়ে ওঠে।

তবে দীর্ঘদিন লবণ জমার ফলে পরিবেশের উপর এতটাই খারাপ প্রভাব পড়েছে যে জলবায়ুও কিছুটা বদলে গিয়েছে সেখানে। সেখানকার বাতাস হয়ে গিয়েছে লবণাক্ত। মাটিতে মিশতে শুরু করেছে ফলে ক্ষতি হচ্ছে চাষাবাদে। এমনকি নদীর জলে মিশে মাছ মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

বাতাস নোনা হয়ে গিয়েছে। মাটিতে মিশতে শুরু করেছে সেই নুন। চাষাবাদে ক্ষতি তো হচ্ছেই, নদীর জলেও নুন মিশে মাছ মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এত কুপ্রভাব থাকা সত্ত্বেও ওই পটাশ উত্তোলনকারী সংস্থাটির বিরুদ্ধে কোনো রকম পদক্ষেপ নিতে পারছেনা স্থানীয় প্রশাসন। আসলে ২০৩০ সাল অব্দি ওই জায়গায় লবণ জমা করার লাইসেন্স রয়েছে তাদের কাছে।