পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি এক মুহুর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেলে কি কি ঘটতে পারে

পৃথিবী নিজের কক্ষপথে ঘুরপাক খেতে খেতে হঠাৎ যদি ঘূর্ণন গতি থেমে যায় তাহলে কি হতে পারে? উদাহরণ হিসেবে একটি গাড়ি যদি ঘন্টায় ১৫০ কিমি বেগে ছুটে এসে কোন কংক্রিটের দেওয়ালে ধাক্কা মারে তাহলে সাথে সাথে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিবেগ ঘন্টায় ১৬৭০ কিমি! তাহলে কি হতে পারে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

এখন জেনে নেওয়া যাক, পৃথিবীর ঘূর্ণন হঠাৎ থেমে গেলে সম্ভাব্য কি কি ঘটতে পারে:-

১) যদি পৃথিবীর ঘূর্ণন হঠাৎ থেমে যায় তাহলে পৃথিবীর উপর অবস্থিত সমস্ত কিছু প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার বেগে পূর্ব দিকে উড়তে শুরু করবে। বাড়িঘর মানুষ পশু-পাখি রাস্তাঘাট কল-কারখানা সমস্ত কিছু এক মুহুর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

২) প্রায় ১৭০০ কিমি বেগে প্রচন্ড বেগে বায়ুপ্রবাহ শুরু হবে। কয়েক সেকেন্ড দুটি স্থানে থাকা মানুষ হয়তো বেঁচে যাবে যারা ওই সময় প্লেনে যাচ্ছিল এবং উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে থাকা মানুষগুলো। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই তারাও মারা যাবে। 

Image result for dangerous wind

৩) পৃথিবীর ঘূর্ণন হঠাৎ থেমে গেলে তৈরি হবে বিশাল সমুদ্রের ঢেউ। উল্লেখ্য ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া সামান্য ভূমিকম্পে যে সুনামির ভয়াবহ তাতে মারা গিয়েছিল প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। তাহলে ভাবুন গোটা পৃথিবীতে এই বিপর্যয় দেখা দিলে মনুষ্যকুল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

৪) পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণেই আমাদের ওজন ভারসাম্য থাকে। যদি পৃথিবীর গতি বেড়ে যায় তাহলে আমাদের ওজন কমে যাবে। গতি বাড়তে থাকলে আমরা ভারহীন হয়ে যাব কিন্তু যদি পৃথিবীর গতি থেমে যায় তাহলে আমাদের ওজন হঠাৎ বেড়ে যাবে।

৫) এই সময় পৃথিবীর সমস্ত জল উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে ভাগ হয়ে যাবে। এই জায়গায় বসবাসকারী সমস্ত মানুষ পশু-পাখি জলের তলে ডুবে যাবে আর মাঝামাঝি নিরক্ষরেখা বরাবর স্থানগুলি শুকিয়ে যাবে।

Image result for dry land

৬) পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি হটাৎ থেমে গেলে মুহূর্তেই প্রচন্ড বেগে ভূমিকম্প দেখা দেবে এবং ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হবে।

৭) এই সময় পৃথিবীতে দুই রকমের আবহাওয়া বিরাজ করবে। আবর্তন বন্ধ হওয়ার কারণে একদিকে একটানা দিন এবং অন্যদিকে একটানা রাত হবে। এরফলে প্রচণ্ড গরম আর অন্যদিকে বরফ জমবে। 

এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কি থেমে যেতে পারে বা থেমে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে? নাসার একটি গবেষণার অনুযায়ী, দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি ১০০ বছর অন্তর ২.৩ মিলিসেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক বিলিয়ন বছর পর দিনের দৈর্ঘ্য রাতের দৈর্ঘ্য থেকে অনেক বেশি হবে এবং তখন হয়তো পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।