অতীতে ভারতবর্ষ ‘সোনার পাখি’ (Golden Bird) নামে পরিচিত ছিল। বিপুল সম্পদের ভান্ডার ছিল এই দেশ। তাই লুণ্ঠনকারীরা বারবার এদেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবং প্রচুর ধনসম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। পর্তুগিজ থেকে শুরু করে মোগল, তুর্কি, ব্রিটিশদের মত লুটেরারা ভারতকে যুগে যুগে লুট করেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারতে যদি কোন হানাদার প্রবেশ না করতো তাহলে আজ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ (Richest Country) হতো।
বহিঃশত্রুরা শুধু এতেই ক্ষান্ত হয়নি, ভারতে রীতিমতো ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। এমন অনেক ঐতিহাসিক ও গর্বের ইমারত ছিল, যা আজ তাদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত। আর তেমনি একটি হলো নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (Nalanda University)। এ বিশ্ববিদ্যালয় এতই জনপ্রিয় ছিল যে, এখানে বিদ্যার্জন করতে সে সময়ে তিব্বত, চীন, কোরিয়া, গ্রিস, পার্সিয়া, তুরস্ক থেকে শিক্ষার্থী আসত। একসময় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতকে ‘বিশ্বগুরু’র (World Guru) আসনে বসিয়েছিল।
চীনের পরিব্রাজক হিউয়েন সাং (Hiuen Tsang) নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার কাঠামো দেখে অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু মানব সভ্যতা যেমন উৎকর্ষের চরম সীমায় পৌঁছতে পারে আবার তেমনি অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে জানে। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এত বড় জ্ঞানপীঠকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল বহিঃশত্রুর দ্বারা।
আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বখতিয়ার খিলজি (Bakhtiyar Khilji) তার সাম্রাজ্য এবং ইসলাম ধর্মের বিস্তার ঘটিয়ে নালন্দাকে ধ্বংস করেছিলেন। বখতিয়ার খিলজির দ্বারা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে দেয়ার পর এর গ্রন্থাগারে যত বই সংরক্ষিত ছিল তা প্রায় ৬ মাসব্যাপী পুড়েছিল। শুধু তাই নয়, ২ থেকে ৩ হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুককে হত্যাও করেন।
এতকিছুর পরেও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসকারী বখতিয়ার খিলজির স্মৃতিতে একটি শহর এবং রেল স্টেশনের জংশনের নাম বখতিয়ারপুর (Bakhtiyarpur Railway Station) রাখা হয়, যা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত। কিছু সাধারণ মানুষ বখতিয়ারপুরের নাম পরিবর্তনের দাবি জানালেও কিছু রাজনৈতিক নেতা স্বার্থের কারণে এর বিরোধ করে বলেন, তাদের জন্ম বখতিয়ারপুরে, তাহলে নাম পরিবর্তন কেন হবে?