বিশ্বের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল: মৌসিনরাম বা চেরাপুঞ্জিতে এত বৃষ্টিপাত হয় কেন

আপনি কি জানেন বিশ্বের সবচেয়ে কোথায় বৃষ্টিপাত হয়? হয়তো জেনে থাকবেন নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আমেরিকার মতো কোনও বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্য। তবে এই জায়গাটি হলো মেঘালয়ের, প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের অন্যতম সুন্দর রাজ্য এটি। মেঘালয়ের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মৌসিনরাম বা চেরাপুঞ্জি শুধুমাত্র দেশেই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। 

মৌসিনরাম ও চেরাপুঞ্জির মধ্যে ১৫ কিলোমিটারের পার্থক্য রয়েছে। প্রতিবছর এই তালিকায় প্রথম স্থানে আসার জন্য দুই শহরের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুসারে, ১৯৮৫ সালে মৌসিনরামে সর্বাধিক ২৬,০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এদিকে সম্প্রতি ১৭ই জুন ২০২২ সালে চেরাপুঞ্জিতে 24 ঘন্টায় ৯৭২ মিলিমিটার প্রবল বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়।

Image

মৌসিনরামে বার্ষিক ৭০০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয় এবং এখান থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিলংয়ে প্রতি বছর ৮০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতও হয় না। এখানে বৃষ্টি এপ্রিল বা মে মাস থেকে শুরু হয় এবং অক্টোবর পর্যন্ত চলে। কিন্তু জানেন মৌসিনরাম বা চেরাপুঞ্জিতে এত বৃষ্টি হয় কেন বা এই জায়গাগুলোকে পৃথিবীর সবচেয়ে আর্দ্র স্থান বলা হয়? 

আসলে মেঘালয়ের এই দুটি শহরই দক্ষিনে খাসি পর্বতমালার কাছে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগর থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস খাসিয়া পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে ঘনীভূত হয়, যে কারণে এই উপত্যকায় ভারী মেঘের সৃষ্টি হয়ে এত বৃষ্টিপাত হয়। উল্লেখ্য চেরাপুঞ্জিতে মৌসিনরামের থেকে ১০০ মিলিমিটার কম বৃষ্টিপাত হয়।

Image

এখানকার শিশুরা বর্ষাকালে দুই ধরনের ছুটি পায়। এক প্রবল বৃষ্টি হলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আর অন্যটি যেদিন আকাশ পরিষ্কার থাকে যাতে শিশুরা বাইরে খেলতে বের হতে পারে। ঘরে আদ্রতা থাকায় এখানকার মানুষরা কাপড় শুকানোর জন্য রুম হিটারের ব্যবহার করেন।

তবে এত জল বৃষ্টির পরেও এই দুই শহর পানীয় জলের অভাবে ভুগছে, কারণ এখানকার মাটি তেমন জল শোষণ করে না। জল সংরক্ষণ করতে এখানকার মানুষ বাঁশ ও পাতার সাহায্যে একটি ঐতিহ্যবাহী ‘বৃষ্টির ঢাল’ তৈরি করে।

এখানকার মাটি সব সময় ভেজা তাই চাষাবাদও কম। এতকিছুর পরেও বর্ষায় মৌসিনরাম ও চেরাপুঞ্জির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতিপ্রাকৃতিক হয়ে ওঠে। ক্যাম্পিং ও ট্রাকিং এর জন্য পর্যটকরা প্রতিবছর এখানে আসেন।