কলিযুগ সম্পর্কে পাণ্ডবরা শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছিলেন যে কলিযুগের প্রকৃতি কেমন হবে। এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের একটি বনে নিয়ে গিয়ে বললেন, এই জঙ্গলের পাঁচটি দিকে তোমরা ভিন্ন ভিন্ন অভিমুখে যাত্রা শুরু করো এবং প্রথম যে ঘটনাটি তোমরা লক্ষ্য করবে, সেটি আমার কাছে এসে ব্যক্ত করো।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা অনুযায়ী পাণ্ডবরা জঙ্গলের পাঁচটি অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। সবার প্রথমে যুধিষ্ঠির ফিরে এসে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা শ্রীকৃষ্ণের কাছে বললেন। তিনি দেখতে পেলেন দুই শুঁড়বিশিষ্ট হাতি জলাশয়ে খেলা করছে। এরপর তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে হাতিটির প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চান।
শ্রীকৃষ্ণ তখন বলেন যে কলিযুগে মানুষ হবে ঠিক এইরকম। কলিযুগের বেশিরভাগ মানুষ হয় মিথ্যাবাদী এবং স্বার্থপর। তারা মুখে এক কথা বললেও কর্মের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন থাকবে। অর্থাৎ কথা, প্রতিশ্রুতি এবং কাজের মধ্যে কোন মিল থাকবে না। এরপর ভীম ফিরে এসে তার অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
ভীম শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, তিনি একটি গরুকে তার বাছুরকে চেটে চেটে আদর করতে দেখেছেন। কিন্তু এত মাত্রায় চাটছে, বাছুরের গায়ে ছাল উঠে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, কলিযুগে পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের প্রতি অতিরিক্ত স্নেহপ্রবণ হবে, যা সন্তানদের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।
এরপর অর্জুন ফিরে এসে শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, একটি শকুনের বিশাল ডানায় বেদ লেখা আছে, কিন্তু শকুনটি নরম মাংস ভক্ষণ করছে। অর্জুন এর কারণ জানতে চান। তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেন, কলিযুগে ভন্ড সাধকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তাদের বেশিরভাগই মনোভাব থাকবে ওই শকুনের মতো। উপরে ধর্মে মোরা জ্ঞানী মানুষগুলো আদতে নিজেই হবে ধর্মভ্রষ্ট।
এরপর নকুল ফিরে এসে তার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। এক বিশাল আকারের পাথরের খণ্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু বড় বড় গাছগুলি আটকাবার চেষ্টা করছে না। শেষ পর্যন্ত একটি গুল্ম গাছের কাছে এসে পাথরটি থেমে যায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, কলিযুগে মানুষের পাপের আকার এই পাথরের মত হবে, যা তার জীবনকে তছনছ করে দেবে।
সবার শেষে সহদেব এসে তার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি দেখলেন জঙ্গলের মাঝে বেশ কয়েকটি কুয়ো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল সবচেয়ে গভীরতম কুয়োটির মধ্যে জল নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, সমাজের সবচেয়ে ধনবান ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সমাজকে শোষণ করবে। সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্যই থাকবে শুধুই অবহেলা। ধনীরা হারাবে তাদের বিচার বিবেচনা করার ন্যূনতম বুদ্ধি।
বর্তমান যুগ সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে পাঁচটি ব্যাখ্যা করে গেছেন, একটু লক্ষ্য করে দেখলে বুঝতে পারবেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে।