মুম্বাইয়ের তাজ হোটেল ব্রিটিশদের অপমানের প্রতিশোধ; কিভাবে বদলা নিয়েছিলেন জামশেদজি

সময়টা ১৮৯০ এর দশক। ব্রিটিশরা ভারত শাসন করছিল। সে সময় শুধু ভারতেই নয় ইউরোপের হোটেলেও ভারতীয়দের প্রতি বৈষম্য করা হতো। ব্রিটেনের ওয়াটসন হোটেলের মত বড় বড় হোটেলে ভারতীয়দের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। এই সময় বিখ্যাত শিল্পপতি জামশেদজি টাটা সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। কথিত আছে, খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও জামশেদজিকে হোটেলে প্রবেশ করতে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল কারণ তিনি ছিলেন একজন ভারতীয়।

জামশেদজি টাটা এটাকে সমগ্র ভারতীয়দের অপমান হিসেবে নিয়েছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তিনি এমন একটি হোটেল তৈরি করবেন যেখানে শুধু ভারতীয়রা নয়, বিদেশীরাও কোন বিধিনিষেধ ছাড়াই থাকতে পারবেন। এইভাবে ভারতের প্রথম সুপার লাক্সারি হোটেল তাজ নির্মিত হয়।

Image

১৮৯৩ সালে জামশেদজি টাটা মুম্বাইয়ের সমুদ্র উপকূলে ১০,০০০ বর্গ গজ জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন। তাজ হোটেলটি মূলত ভারতীয় স্থপতি রাওসাহেব বৈদ্য এবং ডিএন মির্জা দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল। ১৮৯৮ সালে হোটেলটির ভিত্তি স্থাপন করা হয় যার গভীরতা ৪০ ফুট। হোটেলটি সোরাবোঝি কন্ট্রাক্টার দ্বারা নির্মিত হয়।

জামশেদজীর ব্যক্তিত্ব ছিল তিনি অপমানকে একটি উচ্চবিলাসী স্বপ্নে পরিণত করেছিলেন। এটি বোম্বেতে প্রথম বিল্ডিং যা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়, ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য কুলিং মেশিনের মত অনেক সুবিধা ছিল। এতে আমেরিকান ফ্যান, একটি জার্মান লিফট, একটি তুর্কী বাথটাব ছিল। এছাড়াও তাজ ভারতের প্রথম হোটেল যেখানে একজন ইংরেজ কর্মী হিসেবে নিযুক্ত ছিল।

A Sweet Revenge Story Of Jamsetji Tata, Who Built India's Iconic Taj Hotels

মুম্বাইয়ের প্রথম লাইসেন্সযুক্ত বার, ভারতের প্রথম নাইট ক্লাব, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বলরুম, একটি সারাদিনের খাবারের রেস্তোরাঁ সবই এখান থেকে শুরু হয়েছিল। আসলে জামসেদজি চেয়েছিলেন এই হোটেলটি এমন একটি জায়গা হয়ে উঠুক যাতে মানুষ এসে তাদের স্বাভাবিক জীবন ভুলে যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মুম্বাইয়ের ঐতিহাসিক তাজ হোটেলটিকে ৬০০ শয্যায় হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এই হোটেলে ১৯৬০ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। ১৯৪৮ সালের জুন মাসে ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন এই হোটেলে তার বিদায়ী ভাষণ দিয়েছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০০৮ সালে এই হোটেলটিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়।