২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যাওয়া ভারতীয় খেলোয়াড়রা এখন কোথায় ও কি করছেন

২০০৩ বিশ্বকাপে সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে ভারতীয় দল দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল। ওই ম্যাচে রিকি পন্টিংয়ের ১৪০ রানের অনবদ্য ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৩৫৯ রানের বিশাল স্কোরকার্ড খাড়া করে। এরপর সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় দল ২৩৪ রানে অলআউট হয়। এই প্রতিবেদনে সেই ১১ জন ভারতীয় খেলোয়াড়ের কথা বলা হয়েছে, যারা ফাইনাল ম্যাচটি খেলেছিলেন।  

১) শচীন টেন্ডুলকার:

‘মাস্টার ব্লাস্টার’ শচীন টেন্ডুলকার ওই টুর্ণামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন যে কারণে তিনি ম্যান অব দ্যা সিরিজ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ফাইনালের প্রথম ওভারে তিনি মাত্র ৪ রানে আউট হলে ভারতীয় দল বড় ধাক্কা খায়। শচীন টেন্ডুলকার ২০১৩ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এবং মাঝে মধ্যে তাকে ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় দেখা যায়।

২) বীরেন্দ্র শেহবাগ: 

দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে বীরেন্দ্র শেহবাগ ফাইনাল ম্যাচে আক্রমনাত্মক ব্যাটিং করেছিলেন। ১০টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৮২ রান করেছিলেন। শেহবাগই একমাত্র শেষ আশা ছিলেন কিন্তু তিনি আউট হতেই ভারতীয় সমর্থকরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। এই প্রাক্তন ভারতের ক্রিকেটারকে এখন ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় দেখা যায়। 

৩) সৌরভ গাঙ্গুলী:

প্রতিটি ভারতীয় সমর্থকের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর প্রতি বড় উচ্চাশা ছিল। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিলেও ফাইনালে বড়োসড়ো ভুল করে বসেন। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সৌরভ গাঙ্গুলী ব্যাট হাতে ২৪ রান করেন, যার মধ্যে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। তিনি অবসরের পর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজক হন। তবে সৌরভ গাঙ্গুলি এখন বিসিসিআই সভাপতি হয়েছেন এবং একই পুরনো স্টাইলে ভারতীয় ক্রিকেট চালাচ্ছেন।

৪) মোহাম্মদ কাইফ: 

মোহাম্মদ কাইফকে সেই সময় ৪ নম্বরে ব্যাটিং করতে দেখা গিয়েছিল। শেষ ম্যাচে তিনি রানের খাতা খুলতেই পারেননি। ১৫ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারতীয় দল আরও দুর্বল হয়ে পরে। কাইফ অবসরের পর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। একই সঙ্গে কিছুদিন ধরে আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস দলের সহকারী কোচের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি তিনি রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজও খেলেছেন। 

৫) রাহুল দ্রাবিড়:

‘দ্য ওয়াল’ নামে পরিচিত রাহুল দ্রাবিড়কে সেই সময় পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে দেখা যায়। এই টুর্নামেন্টের উইকেট রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। ফাইনালে তিনি ৫৫ বলে ২টি চারের সাহায্যে ৪৭ রান করেছিলেন। তিনি আউট হতেই সমস্ত আশা শেষ হয়ে যায়। দ্রাবিড় অবসর গ্রহণের পর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ভারতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে রয়েছেন।

৬) যুবরাজ সিং:

অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেননি। যুবরাজ সিং ৩৪ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হতেই এখানে দলের আশা পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। যুবরাজ ২০১৯ সালে অবসর নেন। এরপর তাকে কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগ খেলতে দেখা গিয়েছিল। সম্প্রতি রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজও খেলেছেন। 

৭) দীনেশ মোঙ্গিয়া:

ভিভিএস লক্ষণের পরিবর্তে দীনেশ মোঙ্গিয়াকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তবে দীনেশ মোঙ্গিয়া প্রত্যাশামতো পারফর্ম করতে পারেননি, এমনকি ফাইনালেও ব্যর্থ হন। তার ব্যাট থেকে এসেছিল মাত্র ১২ রান। ততক্ষনে সব আশা শেষ। তবে তিনি চাইলে কিছুটা পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে পারতেন। ২০১৯ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানান। অবসর গ্রহণের পর হয়তো তিনি পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছেন। 

৮) হরভজন সিং:

ওই টুর্ণামেন্টে একমাত্র ভারতীয় স্পিনার হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন হরভজন সিং। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে ভালো ফল করলেও ফাইনালে প্রত্যাশামতো কিছু করতে পারেননি। যদিও তিনি ফাইনালে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন কিন্তু অনেক রান দিয়েছিলেন। যে কারণে ১০ ওভার পূর্ণ করতেও পারেননি। এখন তাকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় দেখা যায়।

৯) জাহির খান:

ভারতীয় বাঁহাতি তরুণ ফাস্ট বোলার খানের উপরে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও তিনি পূরণ করতে পারেননি। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি ৭ ওভারে ৯.৫৭ ইকোনমি রেটে ৬৭ রান দিয়েছিলেন ও একটিও উইকেট পাননি। যে কারণে বিপক্ষ দল সহজেই বড় স্কোরে পৌঁছে যায়। এই প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং কোচের দায়িত্বে রয়েছেন।

১০) আশিস নেহরা:

তরুণ ভারতীয় বাঁহাতি ফাস্ট বোলার আশিস নেহরার উপরেও ভারতীয় সমর্থকরা বড় প্রত্যাশা রেখেছিলেন, কিন্তু তিনি সঠিক ভাবে পালন করতে পারেননি। ফাইনাল ম্যাচে তিনি বিনা উইকেটে ১০ ওভারে ৫৭ রান দিয়েছিলেন। যদিও অন্যান্যদের তুলনায় তার ইকোনমি রেট ভালো ছিল। নেহারা ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে এখন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করছেন। 

১১) জাভাগাল শ্রীনাথ:

সেই সময় ভারতীয় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার জাভাগাল শ্রীনাথও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিলেন যে কারণে রিকি পন্টিংয়ের ব্যাটকে থামানো যায়নি। তিনি ফাইনাল ম্যাচে ১০ ওভারে ৮.৭০ ইকোনোমি রেটে ৮৭ রান দিয়েছিলেন। যে কারণে অস্ট্রেলিয়া বড় রানে পৌঁছে যায়। এটাই ছিল শ্রীনাথের শেষ বিশ্বকাপ। এরপর অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এখন তিনি আইসিসির একজন ম্যাচ রেফারি হিসাবে যুক্ত রয়েছেন।