মাত্র ১২ বছর বয়সে ব্রিটিশদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ ‘শহীদ’ হয়েছিলেন

সংসারে বড্ড অভাব, বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন তাই নৌকা পারাপার করা ছিল সংসারের অভাব মেটানোর একমাত্র রাস্তা। পরিবারের সকলের ছোট হলেও ১২ বছর বয়সী বালকটি হয়ে উঠেছিল সেই পরিবারের মূল কান্ডারী। কিন্তু এমন একটি রাত ঘনিয়ে এলো যেখানে ব্রিটিশদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ শহীদ হলেন।

গভীর রাত, বালকটির চোখ লেগে এসেছিল। সেই সময় তিনি শুনতে পেলেন বেশ কর্কশ ভাষায় একটি ডাক। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠলেন এবং দেখলেন তার সামনে দুজন ব্রিটিশ পুলিশ। এক স্বদেশীকে ধরার জন্য তারা নৌকা করে যেতে চেয়েছিল।

Image

কিন্তু বালকটি কোনভাবেই রাজি হয়নি। এমনকি পুলিশের লাল চোখ ও ধমকানিকেও ভয় পায়নি ওই ১২ বছরের ‘বাজী’। এর বদলে তাকে দিতে হলো জীবন। কিন্তু কে জানত এমন একটি রাত তার জীবনের শেষ রাত হবে। ওই দিনটি ছিল ১৯৩৮ সালের ১১ই অক্টোবর।

মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই বাজীর জন্মদিন ছিল যদিও সংসারের অভাবে তার জন্মদিনের আয়োজন করা হতো না। খুব কষ্ট করেই তাদের বাড়িতে উনুন জ্বলতো। ওড়িশার ঢেঙ্কানল জেলার একটি গ্রামে জন্ম হয়েছিল বাজী রাওয়াতের (৫ অক্টোবর, ১৯২৬ সাল)। তার বাবা ছিলেন নীলকন্ঠপুরের একজন মাঝি, নৌকা করে ব্রাহ্মণী নদী পারাপার করতেন। যা আয় হতো তা দিয়েও সংসার চলত না।

বাবা অকালে মারা গেলে সেই পরিবারের হাল ধরেন বাজী। মাত্র ১২ বছর বয়সেই শুরু করলেন নদী পারাপারের কাজ। এই সময় এক দেশীয় রাজা শঙ্কর প্রতাপের অত্যাচারে প্রজারা দিন দিন ক্ষুব্ধ হতে থাকে। তখন সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান বৈষ্ণবচরণ পট্টনায়ক ও হরমোহন পট্টনায়ক। স্থানীয় লোকদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন এবং সেই দলে যোগ দিয়েছিলেন বাজীও।

ওই অত্যাচারী রাজা ব্রিটিশ শাসকদের পাঠালেন ওই গ্রামে রাজস্ব আদায়ের জন্য। আদেশ ছিল কেউ কর দিতে অস্বীকার করলে তার বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে। এদিকে ব্রিটিশদের কাছে খবর ছিল পট্টনায়ক ভাইয়েরা এই গ্রামেই লুকিয়ে রয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজি পর ব্রিটিশ পুলিশরা জানতে পারে তারা নৌকা করে পালিয়ে গেছে।

এরপর ব্রিটিশ পুলিশেরা ওই ১২ বছর বালকের কাছে এসেছিল নৌকা পারাপারের জন্য। কিন্তু বাজী কোনভাবেই রাজি না হলে সাথে সাথেই তাকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে লুটিয়ে পড়ে বালকটির নিথর রক্তাক্ত দেহ। এরপর বাজী হয়ে ওঠেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ শহীদ।