কোহিনুর হিরে থেকে পান্ডুলিপি যে ৯টি মূল্যবান জিনিস লুট করেছে ব্রিটিশরা

প্রায় ২০০ বছর পর ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্ত পেয়েছি আমরা। এই সময় তারা ভারতবর্ষের ক্রমাগত লুটপাট চালিয়েছে। প্রায় ১.৪৫ কোটি হাজার ডলারের ধন-সম্পত্তি এদেশ থেকে নিয়ে গেছে তারা। শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নানান মূল্যবান জিনিস লুট করেছে ব্রিটিশরা।

১) কোহিনুর: কোহিনুর হীরার কথা সকলেরই জানা। এটি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি খনি থেকে উদ্ধার হয়েছিল, যা মুঘল সম্রাটের মুকুটে ছিল এই হিরে। ১৮৪৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হলে রানী ভিক্টোরিয়াকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন ওই সম্রাট। পরবর্তীকালে এই হিরে দেশে ফেরানোর চেষ্টা হয়েছে তবে তা লাভ হয়নি। এখন এটি লন্ডনের জুয়েল হাউসে রাখা আছে।

১৮৪৯ সালে ভারতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশে ঘাঁটি গড়লে রানি ভিক্টোরিয়াকে এই হিরেটি নাকি উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন সম্রাট নিজেই। পরবর্তীকালে এই হিরে দেশে ফেরানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। লন্ডনের জুয়েল হাউসে সেটি রয়েছে।

২) টিপু সুলতানের আংটি: টিপু সুলতান মহীশূরের অধিপতি ছিলেন, যাকে বাঘের সাথে তুলনা করা হতো। ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশদের সাথে তিনি পরাজিত হলে টিপুর তলোয়ার সহ আংটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় ব্রিটিশরা। সেই আংটি নিলামে ওঠে, যার দাম ১.৪৫ লক্ষ হাজার পাউন্ড। এই আংটির উপরে দেবনাগরী ভাষায় লেখা ছিল ‘রাম’।

পরে তরোয়াল ভারতকে ফিরিয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু আংটি ফেরায়নি। ২০১৪ সালে সেই আংটি নিলাম করে দেয় ব্রিটিশরা। তাতে দাম উঠেছিল সাড়ে এক লক্ষ ৪৫ হাজার পাউন্ড। আংটির উপরে দেবনগরী ভাষায় ‘রাম’ লেখা ছিল।

৩) শাহজাহানের সুরাপাত্র: শাজাহান যে পাত্রে সুরা পান করতেন সেটিও নাকি ১৯ শতকে ব্রিটিশরা চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। এটি লন্ডনের অ্যালবার্ট জাদুঘরে রাখা হয়েছে। শাহজাহানের এই পাত্রটি ছাগলের মুখ, সিং এবং পদ্ম পাতার নকশা করা আছে। 

শাহজাহানের পছন্দের এই পাত্রটিতে ছাগলের মুখ, শিং এবং পদ্মপাতার নকশা খোদাই করা রয়েছে।

৪) রস্টো স্টোন: কালো রংয়ের এই ব্যাসল্ট শিলার মূল্যবান জিনিসটি মিশরীয় রাজাদের সম্পত্তি ছিল। এর উপরে মিশরীয় হরফের অনেক কিছু লেখা রয়েছে। প্রথমে এটি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর ১৮০০ সালে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হলে তাদের দখলে আসে। আজও এটি লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে শোভা বাড়াচ্ছে।

রসেটা স্টোন: কালো রঙের এই ব্যাসাল্ট শিলার উচ্চতা ১১৪ সেন্টিমিটার এবং চওড়া ৭২ সেন্টিমিটার। ১৯৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মিশরের ফারাওদের সম্পত্তি ছিল এই শিলা। এর উপর তিন মিশরীয় হরফে অনেক কিছু লেখা রয়েছে।

৫) বেনিন ব্রোঞ্জ: ব্রোঞ্জের পাতের উপর খোদাই করার জন্য বিখ্যাত ছিলেন বেনিন সাম্রাজ্য। ১৯৮৭ সালে বেনিনের আধিপত্য বিস্তারের পর ব্রিটিশরা ২০০ এর বেশি এই খোদাই করা ব্রোঞ্জ চুরি করেছে যেগুলি এখন তাদের জাদুঘরে রাখা আছে।  

বেনিন ব্রোঞ্জ: ব্রোঞ্জের পাতের উপর খোদাই করা হরফের জন্য বিখ্যাত ছিল বেনিন সাম্রাজ্য। ১৯৮৭ সালে বেনিনে আধিপত্য বিস্তারের পর ব্রিটিশরা দু’শোরও বেশি এই খোদাই করা ব্রোঞ্জ চুরি করে নেয়। সেগুলিও ব্রিটিশ জাদুঘরে রাখা রয়েছে।

৬) ইথিওপিয়ার পান্ডুলিপি: ১৮৬৯ সালে ইথিওপিয়ান সম্রাটকে যুদ্ধে হারানোর পর কমপক্ষে ১২টি ধর্মীয় পান্ডুলিপি ব্রিটিশরা নিয়ে যায়। সেগুলিও ব্রিটিশ গ্রন্থশালায় রাখা রয়েছে। পরবর্তীকালে সেগুলি ফিরে পাওয়ার জন্য ইথিওপিয়ানরা একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিল, তবে এই দাবি মেনে নেয়নি ব্রিটিশরা।

ইথিয়োপিয়ার পাণ্ডুলিপি: ১৮৬৯ সালে ইথিয়োপিয়ান সম্রাটকে যুদ্ধে পরাজিত করার পর অন্তত ১২টি ধর্মীয় পাণ্ডুলিপি ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ব্রিটিশ গ্রন্থশালায় সেগুলি রাখা রয়েছে।

৭) এলগিন মার্বেল: প্রাচীন গ্রিকের মন্দির ছিল পার্থেনন। ১৮০৩ সালে ব্রিটিশরা সমস্ত মার্বেল চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল এবং তারা দাবি করে অনুমতি নিয়েই মার্বেল এনেছিল কিন্তু কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। সেগুলি এখন ব্রিটিশ জাদুঘরে রাখা আছে।

এলগিন মার্বেল: প্রাচীন গ্রিক মন্দির ছিল পার্থেনন। ১৮০৩ সালে লর্ড এলগিন এই মন্দিরের মার্বেল নিয়ে চলে এসেছিলেন। এলগিনের দাবি ছিল, অনুমতি নিয়েই তিনি মার্বেল এনেছিলেন। কিন্তু এই দাবির কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি। যদিও গ্রিকদের দাবি মেনে সেগুলি ফিরিয়েও দেননি। ব্রিটিশ জাদুঘরে এটিও রাখা রয়েছে।

৮) অমরাবতী ভাস্কর্য: অমরাবতী ভাস্কর্য বর্তমানে লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে রাখা রয়েছে। ১৪০ বছর আগে তৎকালীন মাদ্রাসা থেকে এই ভাস্কর্য চুরি করেছিল ব্রিটিশরা।

অমরাবতী ভাস্কর্য: এটিও লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে রাখা রয়েছে। ১৪০ বছর আগে তত্কালীন মাদ্রাজ থেকে এই ভাস্কর্য নিয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশরা।

৯) হেভিয়া ব্রাসিলিয়েন্সিস এর বীজ: ব্রাজিল থেকে অন্তত ৭০ হাজার রবার গাছের বীজ চুরি করেছিল এক ব্রিটিশ পর্যটক। সেগুলি লন্ডনের রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনে এই বীজগুলি রাখা আছে। জানা যায়, এর ফলে সেই সময়ে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

হেভিয়া ব্রাসিলিয়েনসিসের বীজ: রাবার গাছের বীজ। ব্রাজিল থেকে অন্তত ৭০ হাজার রাবার গাছের বীজ চুরি করে নিয়েছিলেন হেনরি উইকহ্যাম। হেনরি ছিলেন একজন ব্রিটিশ পর্যটক।