লন্ডনে এমন একটি বহুতল রয়েছে যা সত্যিই গলিয়ে দিতে পারত গাড়ি বা এর সামনে বেশ কিছুক্ষণ থাকলে মানুষের শরীরও পুড়ে যেত। এই বহুতলটি লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিটে অবস্থিত। ২০০৯ সালে এই বহুতলের কাজ শুরু হয় এবং পাঁচ বছর পর পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়। এই বিল্ডিংটি দেখতে অনেকটা ওয়াকি টকির মত। তাই এর আরেকটি নাম ওয়াকি টকি বিল্ডিং।
৩৮ তলার ওয়াকি টকি বিল্ডিংটির উচ্চতা প্রায় ৫২৫ ফুট। এই বহুতলের একেবারে উপরের তিনতলা জুড়ে প্রচুর গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে একটি বাগান। এর সাথে একটি রেস্তোরাঁ এবং পানশালাও রয়েছে। এই বিল্ডিংটি আরও উচ্চতা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কিছু সমস্যা থাকার কারণে উচ্চতা কমানো হয়েছিল। এটি তৈরি করতে মোট খরচ হয় ২০ কোটি পাউন্ড। যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
এই বিল্ডিংটি তৈরি হওয়ার পর সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করে এবং প্রচুর মানুষ এসে এখানে ভিড় জমান। তবে এই বিল্ডিংটি পর্যটকদের যেমন আকর্ষণ করতো তেমনি সাধারণ মানুষের কাছে একটি ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। আসলে এই বহুতলের বাইরেটা সম্পূর্ণ কাঁচের তৈরি ছিল। তাই সূর্যের সরাসরি আলোটি বহুতলে পড়ে উত্তল লেন্সের মতো কাজ করে।
এই বিল্ডিংটির দক্ষিনে যে রাস্তাটা রয়েছে সেখানে সূর্যের আলো সরাসরি পরে এবং তার পাশাপাশি উত্তল লেন্সের মাধ্যমে আলোকরশ্মি এই জায়গায় ফেলে তার তাপমাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। শৈশবে আমরা বিজ্ঞান বইয়ের এই তথ্যটি জেনে অনেকেরই আতস কাচের মাধ্যমে কাগজ জ্বালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
ঠিক একইভাবে ওই বহুতল উত্তল লেন্সের মতো কাজ করে সূর্যের বিক্ষিপ্ত রশ্মিকে একত্রিত করে দক্ষিণের রাস্তার উপর প্রতিফলিত করত। এতে রাস্তার তাপমাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে প্রায় ১১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে যেত। গ্রীষ্মকালে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠত।
২০১৩ সালে একটি ভয়াবহ ঘটনার সাথে থেকে গোটা বিশ্ব। সেই সময়ই বহুতলটি ঠিকমতো উদ্বোধনও হয়নি। এর কাজ প্রায় শেষের দিকে। সেই সময় এই বহুতলের দক্ষিনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িকে গলিয়ে দিয়েছিল। সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত হবার ফলেই এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটে।
অবশ্য গাড়ির মালিককে প্রায় এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল। সেই সময়ই এই রাস্তার আশেপাশে সংলগ্ন এলাকাটি এতটাই উত্তপ্ত হয়েছিল যে সেখানকার মানুষেরা একটি ফ্রাইং প্যানে ডিম ভেজে খায়। সেই থেকে এই বহুতলের আরও একটি নামকরণ হয় ফ্রাইস্ক্র্যাপার। তবে এই ঘটনা যাতে না ঘটে তাই ওই বহুতলটির দক্ষিণের রাস্তার দিকে একটি শামিয়ানা ঝোলানো হয়েছে।