এই ৯ খেলোয়াড়ের অবসর নেওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তাদের বিকল্প খুঁজে পায়নি দল

প্রতিটি দেশের টিম ম্যানেজমেন্ট চায় তাদের খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা দিয়ে ম্যাচ জিতুক। যে কোনও ম্যাচ জিততে হলে সেই দলের অন্তত ৩-৪ জন খেলোয়াড়কে ভালো পারফর্ম করতে হয়। তবে দলে এমন কিছু খেলোয়াড় থাকেন, যাদের ওপর সকল ক্রিকেট প্রেমীর চোখ  থাকে। এই প্রতিবেদনে এমন ৭ জন খেলোয়াড়ের কথা বলা হয়েছে, যাদের অবসর নেওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তাদের বিকল্প খুঁজে পায়নি দল।

১) ব্রায়ান লারা:

কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারার অবসরের পর তার মত এখনও পর্যন্ত কোনও খেলোয়াড় খুঁজে পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ব্রায়ান লারা বিশ্বের একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি একটি টেস্ট ইনিংসে ৪০০ রানের রেকর্ড করেছেন। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৩১ টেস্টে ১১৯৫৩ রান এবং ২৯৯ ওয়ানডেতে ১০৪০৫ রান করেছেন। ক্রিকেটের এই রাজপুত্র তার সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য হতেন। 

২) যুবরাজ সিং:

প্রাক্তন ভারতীয় অলরাউন্ডার ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং মিডল অর্ডারের অন্যতম শক্তিশালী খেলোয়াড় ছিলেন এবং তার জুড়ি মেলা ভার। যুবরাজ সিং ভারতীয় দলের হয়ে তিন ফরম্যাটেই খেলেছেন। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি আক্রমনাত্মক ব্যাটিং করে ভারতীয় দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। এরপর ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে একজন দুর্দান্ত অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করেন এবং ওই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।

৩) অ্যাডাম গিলক্রিস্ট:

প্রাক্তন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট অবসর নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া দল এখনও পর্যন্ত তার বিকল্প খুঁজে পায়নি। তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৯৬ টেস্টে ৫৫৭০ রান, ২৮৭ ওয়ানডেতে ৯৬১৯ রান এবং টি-টোয়েন্টিও খেলেছেন। বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ওয়ানডে বিশ্বকাপের টানা তিনটি (১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সাল) ফাইনালে ৫০-র অধিক রান করে দলকে শিরোপা জিততে সাহায্য করেছিলেন।

৪) মুত্তিয়া মুরালিধরন:

শ্রীলঙ্কা দলের কিংবদন্তি অফ স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন অবসর নেওয়ার পর এই দলটিকে খুবই দুর্বল দেখাচ্ছে। মুরালিধরন বিশ্ব ক্রিকেটের সফল বোলার ছিলেন। তার অবসরের পর তার মত কোনো বোলার খুঁজে পায়নি শ্রীলঙ্কা দল। তিনি বিশ্বের একমাত্র বোলার যিনি টেস্টে ৮০০টি উইকেট নিয়েছেন। এর পাশাপাশি ওয়ানডেতেও সর্বোচ্চ উইকেট (৫৩৪) শিকারী। তার অদ্ভুত স্পিন দিয়ে বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতেন।

৫) শেন ওয়ার্ন:

শেন ওয়ার্নের অবসরের পর অস্ট্রেলিয়া দলে প্রচুর স্পিন বোলার এসেছে কিন্তু তার মতো কেউ সফল হতে পারেনি। এই কিংবদন্তীর লেগ স্পিনার অনেক ব্যাটসম্যানকে সমস্যাই ফেলেছিলেন। শেন ওয়ার্ন অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে ১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট এবং ১৯৪ ওয়ানডেতে ২৯৩টি উইকেট নিয়েছেন। তিনি ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে তিনি দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া তার মতো আজও কোনো বোলার খুঁজে পায়নি। 

৬) এবি ডি ভিলিয়ার্স:

এবি ডি ভিলিয়ার্স তার বিধ্বংসী ব্যাটিং দিয়ে সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার অবসর নেওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার টিম ম্যানেজমেন্ট এখনও পর্যন্ত তার বিকল্প খুঁজে পায়নি। ডিভিলিয়ার্স মাঠের যেকোন প্রান্তে বল পাঠানোর দক্ষতা অর্জন করে মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি নামে পরিচিত হন। তিনি ১১৪ টেস্টে ৮৭৬৫ রান, ২৮৮ ওয়ানডেতে ৯৫৭৭ রান ও ৭৮টি টি-টোয়েন্টিতে ১৬৭২ রান করেছেন। এছাড়া ওয়ানডেতে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির রেকর্ডটি তারই দখলে রয়েছে।  

৭) মহেন্দ্র সিং ধোনি:

মহেন্দ্র সিং ধোনি নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। তার মস্তিস্ক প্রসূত সিদ্ধান্তগুলি ভারতীয় দলকে অনেক সাফল্য দিয়েছে। এছাড়া ধোনি একজন দুর্দান্ত ফিনিশার ছিলেন। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তার অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংসটি ক্রিকেটপ্রেমীরা আজীবন মনে রাখবেন। অধিনায়ক হিসেবে তিনি ভারতীয় দলকে আইসিসির ৩টি ট্রফি দিয়েছেন। সম্ভবত ধোনির বিকল্প আর কখনও খুঁজে পাবেনা ভারতীয় দল।

৮) কুমার সাঙ্গাকারা:

শ্রীলঙ্কা দলের ক্রিকেট কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার অবসরের পর এখনও পর্যন্ত তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শচীনের পরেই সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনি। সাঙ্গাকারা একজন দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান হওয়ার পাশাপাশি অধিনায়ক ও উইকেটকিপার হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি ১৩৪ টেস্টে ১২৪০০ রান, ৪০৪ ওয়ানডেতে ১৪২৩৪ রান এবং ৫৬ টি-টোয়েন্টিতে ১৩৮২ রান করেছেন।

৯) জ্যাক ক্যালিস:

বিশ্বের সর্বোত্তম অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস, যার বিকল্প আজ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা দল। টেস্টে শচীনের পরেই দ্বিতীয় সর্বাধিক সেঞ্চুরি (৪৫) তার নামে রয়েছে। জ্যাক ক্যালিস ১৬৬ টেস্টে ১৩২৮৯ রান, ৩২৮ ওয়ানডেতে ১১৫৭৯ রান এবং ২৫টি টি-টোয়েন্টিতে ৬৬৬ রান করেছেন। তিনি বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় যার নামে টেস্ট ও ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটে ১০ হাজার রান ও ২৫০ র বেশি উইকেট রয়েছে।