একেবারে ‘সোনার দ্বীপ’ খুঁজে পেলেন মৎস্যজীবীরা, সেখানে পাওয়া গেল বিপুল সম্পদ

এটি কোন রূপকথার গল্প নয়, এই দ্বীপটি যেন সোনা দিয়ে মোড়া। এই দ্বীপটিকে সোনার দ্বীপ বলা হয় কারণ এখানে ঘোরাফেরা করলেই সোনা খুঁজে পাওয়া যায়। সম্ভবত এই কারনেই দ্বীপটির নাম ‘সোনার দ্বীপ বা আইল্যান্ড অফ গোল্ড’ রাখা হয়েছে। এমন একটি দ্বীপের অস্তিত্ব নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা বহুদিন ধরেই সন্ধান চালিয়েছিলেন। তবে এই দ্বীপটি কোথায় রয়েছে সে বিষয়ে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না তারা।

বহুদিন পর এই দ্বীপটির সন্ধান মিলেছে ইন্দোনেশিয়ার মুসি নদীর মাঝ বরাবর অংশে। এর পাশাপাশি ওই দ্বীপটিতে হারিয়ে যাওয়া এক সভ্যতারও খোঁজ পাওয়া গেছে। বছর পাঁচেক আগে ইন্দোনেশিয়ার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এমনই একটি গুপ্তধন ভরা দ্বীপের কথা। তারপর থেকেই তল্লাশি শুরু হয়েছিল।

যেন কোনও রূপকথা। সোনা দিয়ে মোড়া একটি আস্ত দ্বীপ। সোনায় মোড়া বলার কারণ এ দ্বীপে চলাফেরা করলেও নাকি মিলতে পারে সোনা। দ্বীপের পোশাকি নামও তাই ‘সোনার দ্বীপ’। বাস্তবেই রয়েছে এমন দ্বীপ!

ওই অঞ্চলে স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও দ্বীপটির সন্ধান চালাতে শুরু করেন। তবে মুসি নদী কুমিরের জন্য বিখ্যাত হলেও প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই তারা এতদিন সন্ধান চালিয়ে আসছিলেন। অবশেষে সোনায় মোড়া দ্বীপের খোঁজ পেয়ে হতবাক হয়েছেন মৎস্যজীবীরা। এই দ্বীপ থেকে একটি বহুমূল্য বুদ্ধমূর্তি সহ মূল্যবান পাথর ও সোনার গহনা ও ব্রোঞ্জের মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। শুধুমাত্র বুদ্ধমূর্তিটির মূল্য কয়েক কোটি টাকার চেয়েও বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলি সবই শ্রীবিজয় সভ্যতার অংশ। সাত থেকে ১৩ শতক পর্যন্ত দাপিয়ে রাজত্ব করেছিল এই সভ্যতা। তার পর একপ্রকার রহস্য রেখেই তা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গেও নাকি এর অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই সভ্যতা ছিল শ্রীবিজয় সভ্যতা, যা সপ্তম শতক থেকে ত্রয়োদশ শতকে পর্যন্ত অস্তিত্ব ছিল। তবে এই সভ্যতা কিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেল তা কারোরই জানা নেই। এই সভ্যতার সাথে ভারতীয় সংস্কৃতির অনেক মিল পাওয়া গেছে। এই সভ্যতার চারিদিকে ছিল জল, তাই একে ‘ওয়াটার ওয়ার্ল্ড’ও বলা হত।

এই সভ্যতার অনেকেই নৌকোর ওপরে ঘর বানিয়ে বসবাস করতেন এবং বিলুপ্তির সাথে সাথে মন্দির, প্রাসাদ, নৌকায় বানানো ঘর সবই জলে তলিয়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, বছর পাঁচেক আগে থেকেই শ্রীবিজয় সভ্যতার সন্ধান পাওয়া যায়। এই দ্বীপ থেকে কিছু কিছু মূল্যবান সম্পদ উদ্ধার হতেই তা জানা যায়। এই সাম্রাজ্যে ২০ হাজারের বেশি সেনা ও এর পাশাপাশি অনেক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীও থাকতেন।

কী ভাবে এই সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটল সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি প্রত্নতত্ত্ববিদরা। বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, ইন্দোনেশিয়ার অগ্ন্যুৎপাতের কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আবার একাংশের মতে, মুসি নদীর ভয়ঙ্কর বন্যাই এর বিলুপ্তির কারণ।

কিভাবে এই সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা সঠিকভাবে কোন তথ্য দিতে পারেনি। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ইন্দোনেশিয়ায় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারনেই ধ্বংস হয়ে যায় এই সভ্যতার। কেউ কেউ দাবি করেন, মুসি নদীর ভয়াবহ বন্যার কারণেই এই সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে। সরকারিভাবে এই দ্বীপটি নিয়ে তেমন কোন তল্লাশি চালানো হয়নি বলেই এতদিন সকলের আড়ালে ছিল। নদীর বুকে চর জেগে উঠতেই এই দ্বীপটি মৎস্যজীবীদের নজরে আসে।