ক্রিকেট একটি দলগত খেলা। সুতরাং, প্রতিটি খেলোয়াড় অবশ্যই তার দলকে তার চেয়ে এগিয়ে রাখতে চাইবেন। তবে, অনেকসময় দেখা গেছে যে ক্রিকেটাররা দলের চেয়ে নিজেদের এগিয়ে রেখেছেন। বেশ কয়েকটি ঘটনা রয়েছে যেখানে তারা ‘স্বার্থপর’ এর মতো ইনিংস খেলে দলকে ডুবিয়েছিলেন।
আজকের প্রতিবেদনে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের ৮টি স্বার্থপর ইনিংস বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:-
৮) জ্যাক কালিস: ৬৩ বলে ৪৮ রান
২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া দল ম্যাথু হেডেন এর দুর্দান্ত সেঞ্চুরির দৌলতে ৩৭৭ রানের বিশাল টার্গেট দেয়। এরপর প্রোটিয়ারা ব্যাট করতে নেমে প্রথম কুড়ি ওভারে ১৬০ রান তোলে। ওপেনার স্মিথ, হার্সেল গিবস ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের দুর্দান্ত ব্যাটিং এর জেরে রিকোয়ার রান রেট ৭ এর কাছাকাছি ছিল। কিন্তু জ্যাক ক্যালিসের ৬৩ বলে ৪৮ রানের ইনিংসটি রান রেট দ্বিগুণ হয় ও ম্যাচটি নাগালের বাইরে চলে যায়।
৭) এমএস ধোনি: ১১৭ বলে ৫৪ রান
সর্বকালের সেরা ফিনিশার মহেন্দ্র সিং ধোনিও এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচটি জয়ের পর ভারত চতুর্থ ওয়ানডে জিতে সিরিজ জয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ভারত ১৯০ রান তাড়া করতে ব্যর্থ হয় এবং ১১ রানে পরাজিত হয়। এই ম্যাচে মহেন্দ্র সিং ধোনির ১১৭ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটি নিয়ে অনেকেই কটাক্ষ করতে থাকেন।
৬) মিসবাহ-উল-হক: ৭৬ বলে ৫৬ রান
২০১১ বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান সেমিফাইনাল অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্মরণীয় ম্যাচ। এই ম্যাচে ভারতীয় দল ২৬০ রান তোলার পর পাকিস্তানি দল ব্যাট করতে নামে। কিন্তু মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মিসবাহ-উল-হকের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল তিনি টেস্ট খেলছেন। যদিও তাকে শেষদিকে বড় শট খেলতে দেখা যায়। তার ৭৬ বলে ৫৬ রানের ইনিংসটির জন্য পাকিস্তানি দল ৩১ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়।
৫) মনোজ প্রভাকর: ১৫৪ বলে ১০২ রান
ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে চলা একটি ওয়ানডে ম্যাচে মনোজ প্রভাকর একটি স্বার্থপরের ইনিংস খেলেছিলেন। ভারতীয় দল ২৫৮ রান তাড়া করতে নেমে মনোজ প্রভাকর ম্যাচ জেতার কোনো চেষ্টাই করেননি। তিনি ১৫৪ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলেন ও দলকে ৪৬ রানের পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়।
৪) ডেভিড ওয়ার্নার: ১৪০ বলে ১০০ রান
অস্ট্রেলিয়ার বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার ২০১২ সালে সিবি সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪০ বলে ১০০ রান করেছিলেন। যেখানে অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ৯১ বলে ১১৭ রান করে তার দলকে ২৭১-এ নিয়ে যান। এরপর শ্রীলঙ্কা দল রান তাড়া করতে সফল হয়। ওয়ার্নারের ধীরগতিসম্পন্ন ব্যাটিংয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া পরাজিত হয়।
৩) রবি শাস্ত্রী: ৬৭ বলে ২৫ রান
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান তাড়া করতে নেমে ওপেনার রবি শাস্ত্রী ৬৭ বলে ২৫ রান করে দলকে কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে দেন। এরপর বৃষ্টির কারণে ৪৭ ওভারে ২৩৬ রানের টার্গেটটি আরো কঠিন হয়ে যায়। ম্যাচে হেরে ভারতীয় দল সেমিফাইনাল থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। এরপর রবি শাস্ত্রী খুবই সমালোচনার মুখোমুখি হন।
২) শচীন টেন্ডুলকার: ১৪৭ বলে ১১৪ রান
‘মাস্টার ব্লাস্টার’ শচীন টেন্ডুলকারের ১০০তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটি এসেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। একদিকে গৌরব অর্জনের পাশাপাশি তার এই ইনিংসটি ঘিরে প্রচুর সমালোচনা হয়। ২০১২ এশিয়া কাপে শচীন টেন্ডুলকার ১৪৭ বলে ১১৪ রানের ইনিংস ও অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের ঝড়ো ইনিংসের দৌলতে ভারতীয় দল ২৮৯ রানে করে। তবে বাংলাদেশের কাছে হেরে ভারত এশিয়া কাপের ফাইনালের যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
১) সুনীল গাওস্কর: ১৭৪ বলে ৩৬* রান
সুনীল গাওস্করের কৃতিত্ব যাই হোক না কেন, ৪৬ বছর কেটে গেলেও এই ইনিংসটি আজও সমালোচিত হয়। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দল প্রথমে ব্যাট করে ৬০ ওভারে ৩৩৪ রান তোলে। এই বিশাল অঙ্কের রান তাড়া করতে নেমে ভারতীয় ওপেনার সুনীল গাওস্কর ১৭৪ বলে মাত্র ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন। গাওস্কর কোন চেষ্টাও করেননি রান সংগ্রহ করার, যদিও সেই যুগে টিকে থাকাকেও প্রাধান্য দেওয়া হতো।