কালাপানির শাস্তি থেকে নির্মম হত্যাকাণ্ড, ব্রিটিশদের নৃশংসতার ৫টি ঘটনা

ভারত এ বছর ১৫ই আগস্ট তার ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে চলেছে। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের বর্বরোচিত শাসনামলে ভারতীয়রা নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয় ও বহু মানুষের প্রাণ যায়। এই প্রতিবেদনে কালাপানির শাস্তি থেকে নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্রিটিশদের পাঁচটি নৃশংসতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। যা ব্রিটিশদের অত্যাচারের কথা শুনে এখনো মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়।

১) কালাপানির শাস্তি:

Image

ব্রিটিশ আমলের শব্দের নিশংস শাস্তি ছিল কালাপানির শাস্তি। এটি সেলুলার জেল নামে পরিচিত। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে নির্মিত হয়েছিল এই কারাগার। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারারুদ্ধ করার জন্য ব্রিটিশ এটি নির্মাণ করে। কারাগারটি গভীর সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত যার চারপাশে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত কেবল সমুদ্রের জল দেখা যায়। অর্থাৎ বন্দীরা পালিয়ে গিয়েও অন্য কোথাও যেতে পারত না। এখানকার সেলগুলি এতটাই ছোট ছিল যে ভালো করে বসার সুযোগ টুকু ছিল না। এই কারাগারে কত যে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রাণ হারিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। কালাপানি ভারতের ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায়।

২) নৃশংস হত্যাকাণ্ড:

Image

ব্রিটিশরা তাদের শাসন আমলে ভারতের অসংখ্য মহাপুরুষকে হত্যা করেছিল। এর মধ্যে ছিলেন মঙ্গল পান্ডে, লালা লাজপত রায়, চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগত সিং সুখদেব রাজগুরু প্রমূখ। এছাড়া ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের হাজার হাজার মানুষের হত্যার কথা শুনে আজও হৃদয় কাঁপে। তার আগে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে ব্রিটিশ অগণিত মানুষকে হত্যা করেছিল।

৩) বন্ডেড লেবার:

Image

শিল্প বিপ্লবের পর ব্রিটিশরা সারা বিশ্বে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে। তাই অনেক উপনিবেশিক দেশ গুলিতে কর্মরত লোকের অভাব ছিল। সেই সময় ব্রিটিশরা তাদের চাহিদা মেটাতে ভারতীয় শ্রমিকদের বিভিন্ন উপনিবেশে নিয়ে যায়। তাদের বলা হতো চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক। ১৮৩৪ থেকে ব্রিটিশরা লক্ষ লক্ষ ভারতীয় মানুষকে ক্রীতদাস বানিয়ে আফ্রিকা, মরিশাস ত্রিনিদাদের মতো দেশগুলোতে পাঠিয়েছিল। উল্লেখ্য মরিশাসে আজও ৬০ শতাংশের জনসংখ্যা ভারতীয়।

৪) মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ:

Image

১৯৪২-৪৩ সালে বাংলা ওড়িশার অঞ্চলের দুর্ভিক্ষকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই অঞ্চলটি বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যাকে গ্রাস করেছিল। প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষের কারণে মারা যায়। শহর ও গ্রামের রাস্তায় কঙ্কালের স্তূপ ছিল। ওই বছর ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং সেই সাথে ব্রিটিশরা প্রচুর পরিমাণে শস্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ব্যবহার করে। ভারতের শস্য জাহাজে করে ব্রিটেনে পাঠানো হচ্ছিল আর অন্যদিকে ভারতের লাখ লাখ মানুষ খিদের জ্বালায় প্রাণ হারাচ্ছিল।  

৫) সুতির শিল্প ধ্বংস:

Image

একসময় ভারত সুতি বস্ত্র রপ্তানিতে শীর্ষস্থানীয় দেশ ছিল। তবে ব্রিটিশদের বিভ্রান্তকর নীতি এই শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়। ব্রিটিশরা ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে ভারী কর আরোপ করে। একই সময় ব্রিটিশ থেকে ভারতে আমদানি করা অন্যের উপর কর কমানো হয়েছিল। এর ফলে ভারতীয় শিল্প ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে চলে যায়। এমনকি কৃষকদের জমিতে নীলকররা জোর করে ক্ষেতগুলোকে অনুর্বর করে দিয়েছিল। একই সাথে ব্রিটিশদের জমিদারি প্রথা এবং অতিরিক্ত খাজনা ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেয়। এ কারণে সমাজে উঁচু-নিচুর ব্যবধান অনেক বেড়ে গেছে।